ওরে ধ্বংস-পথের যাত্রী-দল! ধর্ হাতুড়ি, তোল্ কাঁধে শাবল (ore dhongsho-pother jatri-dol!)
শ্রমিকের গান
ওরে ধ্বংস-পথের যাত্রী-দল! ধর্ হাতুড়ি, তোল্ কাঁধে শাবল।
আমরা হাতের সুখে গড়েছি ভাই, পায়ের সুখে ভাঙব চল্॥
ও ভাই আমাদেরি শক্তি-বলে,
পাহাড় টলে তুষার গ’লে –
মরুভূমে সোনার ফসল ফলে রে!
মোরা সিন্ধু ম’থে এনে সুধা পাই না ক্ষুধায় বিন্দু জল॥
ও ভাই আমরা কলির কলের কুলি,
কলুর বলদ চক্ষে-ঠুলি
হীরা পেয়ে রাজ-শিরে দিই তুলি রে!
আজ মানব-কুলের কালি মেখে আমরা কালো কুলির দল॥
আমরা পাতাল ফেড়ে খুঁড়ে’ খনি
আনি ফণির মাথার মণি,
তাই পেয়ে সব শনি হ’ল ধনী রে!
এবার ফণী-মনসার নাগ-নাগিনী আয় রে গর্জে মার্ ছোবল॥
যত শ্রমিক শুষে নিঙ্ড়ে প্রজা,
রাজা উজির মারছে মজা,
আমরা মরি ব’য়ে তাদের বোঝা রে!
এবার জুজুর দল ঐ হজুরে দলে দল্বি রে আয় মজুর দল॥
ও ভাই মোদের বলে হতেছে পার,
হপ্তা রোজে সপ্ত পাথার
সাঁতার কেটে জাহাজ কাতার কাহার্ রে!
তবু মোরাই জনম চলছি ঠেলে ক্লেশ-পাথরের সাঁতার-জল॥
আজ ছ’ মাসের পথ ছ’ দিনে যায়,
কামান-গোলা রাজার সিপাই
মোদের শ্রমে মোদেরি সে-কৃপায় রে!
ও ভাই মোদের পুণ্যে শূন্যে ওড়ে ঐ ভুঁড়োদের উড়োকল!
ও ভাই দালান-বাড়ি আমরা গ’ড়ে –
রইনু জনম ধূলায় প’ড়ে,
বেড়ায় ধনী মোদের ঘাড়ে চ’ড়ে রে!
আমরা চিনির বলদ, চিনি নে স্বাদ চিনি বওয়ািই সার কেবল॥
ও ভাই আমরা মায়ের ময়লা ছেলে
কয়লা খনির বয়লা ঠেলে
যে অগ্নি দিই দিগ্বিদিকে জ্বেলে রে!
এবার জ্বালবে জগৎ কয়লা-কাঁটা ময়লা কুলির সেই অনল॥
ও ভাই আমাদের কাজ হলে বাসি
আমরা মুটে, কল্-খালাসী!
ডুবলে তরী – মোরাই তুলতে আসি রে!
আমরা বলির মতন দান ক’রে সব পেলাম শেষে পাতার-তল॥
মোদের যা ছিল সব দিইছি ফুঁকে,
এইবারে শেষ কপাল ঠুকে’
পড়ব রুখে অত্যাচারীর বুকে রে!
এবার নূতন ক’রে মল্লভূমে গর্জাবে ভাই দল-মাদল॥
ঐ শয়তানী চোখ কলের বাতি
নিবিয়ে আয় রে ধ্বংস-সাথী!
ধর্ হাতিয়ার, সামনে প্রলয়-রাতি রে!
আয় আলোক-স্নানের যাত্রীরা আয় আঁধার নায়ে চড়বি চল্॥
- রচনাকাল ও স্থান: ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬-৭ ফেব্রুয়ারি (২৩-২৪ মাঘ ১৩৩২) কৃষ্ণন্রে 'নিখিল বঙ্গীয় প্রজা সম্মেলন'-এর অনুষ্ঠান হয়। এই তিনি অনুষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান ছিলেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের কুজকাওয়াজের প্রশিক্ষণ দেন। এই অনুষ্ঠানের জন্য তিনি এই গানটি রচনা করেছিলেন।
'শ্রমিকের গান' শিরোনামে এই গানটি প্রকাশিত হয়েছিল লাঙল পত্রিকার ৯ম সংখ্যার (বৃহস্পতিবার, ৬ই ফাল্গুন ১৩৩২) ২-৪ পৃষ্ঠায়। এই গানের নিচের রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ ছিল- 'কৃষ্ণনগর/২০শে মাঘ ১৩৩২'।
এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৬ বৎসর ৯ মাস।
- গ্রন্থ
- সর্বহারা
- প্রথম সংস্করণ [২৫ অক্টোবর ১৯২৬ (৮ কার্তিক ১৩৩৩)। শিরোনাম 'শ্রমিকের গান']
- নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড (বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭)]
- সর্বহারা
- পত্রিকা: লাঙল [৬ই ফাল্গুন ১৩৩২। বৃহস্পতিবার ১৮ ই ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ। শ্রমিকের গান। পৃষ্ঠা: ৩-৪।]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- নিতাই ঘটক। সঙ্গীতাঞ্জলি। দ্বিতীয় খণ্ড। দ্বিতীয় সংস্করণ। শ্যামাপূজা, ১৩৮৩। গান সংখ্যা ৩। শিরোনাম: শ্রমিকের গান। ১৩-১৬ [নমুনা]
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: গণ-সঙ্গীত (শ্রমিকের গান)
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: সা