কে শিব সুন্দর শরৎ-চাঁদ চূড় (ke shib shundor shorot-chand chur)

কে শিব সুন্দর শরৎ-চাঁদ চূড়
        দাঁড়ালে আসিয়া এ অঙ্গনে।
পীড়িত নরনারী আসিল গেহ ছাড়ি'
        ভরিল নভতল-ক্রন্দনে॥
বেদনা-মন্দিরে আরতি বাজে তব,
কে তুমি সুন্দর শ্মশানচারী নব,
দিগদিগন্তরে জীবন-উৎসব-
         শঙ্খ শুনি তব আগমনে॥ 
মৃত্যু-জয়ী তুমি হওনি সুধা পিয়ে,
দুখেরে দহিয়াছ বিষের দাহ দিয়ে।
ভূষণ করি ফণী আদরে দিয়ে দোলা
কি মণি পেলে বলো ওগো ও চির-ভোলা!
কভু সে ডম্বরু বাজাও অম্বরে,
প্রলয়-নর্তন জাগে চরাচরে,
            ললাট-জ্বালা-পাশে
            চন্দ্রলেখা হাসে
                নবীন সৃষ্টির হরষনে॥ 
পতিতা গঙ্গারে ধরিলে নিজ শিরে,
কন্যারূপে তাই পেলে কি ভারতীরে,
            স্বরগ এল নেমে
            মরতে তব প্রেমে,
            নমামি দেব-দেব ও-চরণে॥

  • ভাবসন্ধান: আদ্যশক্তি বহুরূপী শিব জগতকে আচ্ছন্ন করে রেখেছেন অনাদিকাল থেকে। শিবের এই অন্তহীন মহিমাকে এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে নানা রূপে।

    ভক্তের কাছে তিনি আসেন শরতের মোহনীয় চাঁদকে তাঁর মস্তকচূড়ায় ধারণ করে। পীড়িত নরনারী দুঃখমোচনের ভরসা হিসেবে- তাঁরই ভরসায় তাঁরা ঘর ছেড়ে আসেন তাঁর সকাশে। তাই ধরাধাম ভরে ওঠে ব্যথিতের ক্রন্দন-রোলে। তাঁদের দুঃখে বেদনা-মন্দিরে বেদনার আরতি বাজে।

    তিনি আসেন সত্য-সুন্দর রূপে, শ্মশানচারী হয়ে। দিগদিগন্তের জীবন-উৎসবের শঙ্খধ্বনি বাজে তাঁর আগমনে॥  তিনি সমুদ্র-মন্থনে পাওয়া অমৃতসুধা পান করে অমর হন নি, হয়েছেন দুঃখের বিষ পান করে। তাঁর কণ্ঠিভূষণ ভীষণ ভুজঙ্গের দোলা। এসবের মধ্যে কি এমন রত্ণ লুকয়ে আছে কবি তা জানেন না। সহজ-সরল শিব অল্পতেই ভক্তের অপরাধ ভুলে যান। তিনি তাঁর নিজের মহিমা ভুলে গিয়ে আত্মভোলা হয়ে বিচরণ করেন বলেই তিনি চিরভোলা।

    তিনি কখনো অত্যাচারী বিনাশে, জগতের জরাজীর্ণ দশাকে ধ্বংস করার জন্য প্রলয় ডমরুর তালে প্রলয়ননৃত্যে মেতে ওঠেন। তাঁর তৃতীয় নয়নের অগ্নিজ্বালার পাশে নবসৃষ্টির আনন্দে হাসে চন্দ্রলেখা।

    তিনি স্বরগ থেকে পতিতা গঙ্গাকে ধারণ করেছেন তাঁর মস্তকজটায়। ভারতী (সরস্বতী) হয়েছেন তাঁর কন্যাসমা। তাঁরই মর্তপ্রেমের মহিমায় মর্ত হয়েছে স্বর্গভূমি। তাই কবি তাঁর পরম ভক্তিতে দেবাদিদেব মহাদেব নামে তাঁর চরণে প্রণতি জানিয়েছেন।  
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের কার্তিক (নভেম্বর ১৯২৮) মাসে প্রকাশিত 'বুলবুল' নামক সঙ্গীত-সংকলনে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৯ বৎসর ৫ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • বুলবুল
      • প্রথম সংস্করণ।নভেম্বর ১৯২৮। কার্তিক ১৩৩৫। গান ৪২। দেশ-গীতাঙ্গী।
      • নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। বুলবুল। গান ৪২। দেশ-গীতাঙ্গী। পৃষ্ঠা: ১৮১-১৮২]
    • নজরুল-গীতিকা
      • প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। দেশ-গীতাঙ্গী। পৃষ্ঠা ১১৪-১১৫]
      • ননজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা ফাল্গুন ১৪১৩/মার্চ ২০০৭।]  নজরুল গীতিকা।  ৯২।  ধ্রুপদ। দেশ-গীতাঙ্গী। পৃষ্ঠা: ২৩৬]
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, [নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২। ১৮৬৫ সংখ্যক গান। 
  • পর্যায়
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। শিব। বন্দনা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।