রুমুঝুম রুমুঝুম্ কে এলে নূপুর পায় (rumujhum rumujhum ke ele)
রুমুঝুম রুমুঝুম্ কে এলে নূপুর পায়
ফুটিল শাখে মুকুল ও রাঙা চরণ-ঘায়॥
সে নাচে তটিনী-জল টলমল টলমল,
বনের বেণী উতল ফুলদল মুরছায়॥
বিজরি-জরীর আঁচল ঝলমল ঝলমল
নামিল নভে বাদল ছলছল বেদনায়।
তালীবন থৈ তাথৈ করতালি হানে ঐ, (হায় রে হায়)
'কবি, তোর তমালী কই' — শ্বসিছে পুবালি-বায়॥
- ভাবার্থ: নৃত্যের ছন্দের মূর্ত রূপের ভিতরে যে বিমূর্ত নান্দনিক রূপ লুকিয়ে থাকে, কবি তা অনুভব করেন শিল্পাচারে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভিতরে। যেন কোনো একটি শিল্পাঙ্গনে- স্লাইড-শো-এর মতো একের পরে এক আসে নান্দনিক রূপ নিয়ে।
এটি মূলত শৃঙ্গার রসে সিক্ত বর্ষার গান। গানের স্থায়ীতে বর্ষা যেন হঠাৎ করে আবির্ভুত হয় মঞ্চে। যেন নূপুরের রুমুঝুম শব্দ তুলে আসরে নামেন কোনো এক নৃত্যশিল্পী। তার রাঙা পায়ের ছন্দাঘাতে ফুটে ওঠে সৌন্দর্যের ফুল। এরপর পরে স্লাইড আসে বাংলার বর্ষার সচলচিত্র। এখানে বর্ষাও যেন নৃত্যশীলা। তার নাচের ছন্দে তরঙ্গে তরঙ্গে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে নদীর জল, তার বেণীরূপী বন আন্দোলনে পুষ্পরাশি মূর্ছিত হয়। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে বর্ষানটিনী আঁচল ঝলমলে বিজুরি দ্যুতি ছড়ায়। তারপর নেমে আসে সৌন্দর্যের অশ্রু-বাদল। এরপরে পর্দায় ভেসে ওঠে শ্যামলী মেঘমালা দিয়ে রচিত তন্বী নটিনীর মেখলা-হার। সেখানে কবি সন্ধান করেন প্রেয়সীর গ্রীবাদেশে পতিত অলকগুচ্ছের আন্দোলন। শেষ অন্তরাতে কবি তাল বনের আন্দোলনে তার পাতায় বাজে করতালি। এসবের ভিতরে পূর্ণতা পাওয়ার জন্য কবি তালের প্রেয়সী তমালীর (তমালবৃক্ষ, যুগল শব্দ তালতমাল, তালের প্রেয়সী অর্থে তমালী) সন্ধান করেন। তমালী-বিহীন তাল বনে উঠ যেন বিরহের হাহাকার। কবি ভাবেন কোথায় সে বিরহিনী তমালী পূবালী বাতাসে শ্বসিছে (শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করছে)। গানের এই অংশে কবি সন্ধান করেছেন শৃঙ্গার রসের বিরহী ভাবাবেগ।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের কার্তিক (নভেম্বর ১৯২৮) মাসে প্রকাশিত 'বুলবুল' নামক সঙ্গীত-সংকলনে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৯ বৎসর ৫ মাস।
- গ্রন্থ:
- বুলবুল।
- প্রথম সংস্করণ।নভেম্বর ১৯২৮। কার্তিক ১৩৩৫। গান ২৭। পিলু-দাদরা।
- নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। বুলবুল। গান ২৭। পিলু-দাদরা। পৃষ্ঠা: ১৭২-১৭৩]
- নজরুল-গীতিকা।
- প্রথম সংস্করণ। সেপ্টেম্বর ১৯৩০। ভাদ্র ১৩৩৭। গজল। ২১। পিলু-দাদরা। পৃষ্ঠা ৮০]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা জুন ২০১২। নজরুল গীতিকা। ৬৬। গজল। পিলু-দাদরা। পৃষ্ঠা: ২১৫-২১৬]
- বুলবুল।
- পত্রিকা: সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা। জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮। মে-জুন ১৯৩১। স্বরলিপিকার: ক্ষিরোদচন্দ্র রায় বি, এল। [নমুনা]
- রেকর্ড:
- এইচএমভি। ডিসেম্বর ১৯২৯ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৩৬)। পি ১১৬৬১। শিল্পী ইন্দুবালা।
- ভিয়েলোফোন। এপ্রিল ১৯৩১ (চৈত্র ১৩৩৭- বৈশাখ ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ)। টি ৬০০১। শিল্পী: বি. গোস্বামী। [শ্রবণ নমুনা]
- সুরকার: নজরুল ইসলাম [সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা। জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮। মে-জুন ১৯৩১]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- ক্ষিরোদচন্দ্র রায় বি, এল। [সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা। জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮। মে-জুন ১৯৩১] [নমুনা]
- আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, ত্রিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। আষাঢ়, ১৪১৩/জুলাই ২০০৬] ইন্দুবালার রেকর্ডে গাওয়া গান অবলম্বনে কৃত স্বরলিপি। ২৪ সংখ্যক গান। স্বরলিপির সাথে উল্লিখিত রেকর্ড নম্বর ভুলক্রমে ছাপা হয়েছে ১১৬১। প্রকৃত নম্বর হবে ১১৬৬১ [নমুনা]
- ইদ্রিস আলী। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চাশতম খণ্ড, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, কার্তিক ১৪২৬। জুন নভেম্বর ২০১৯। বিনয় গোস্বামীর রেকর্ডে গাওয়া গান অবলম্বনে কৃত স্বরলিপি। [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি
- সুরাঙ্গ: গজল
- রাগ: পিলু
- তাল: দাদরা [সকল স্বরলিপি]
- গ্রহস্বর:
- রজ্ঞা [ক্ষিরোদচন্দ্র রায় বি, এল-কৃত স্বরলিপি]
- মা [আহসান মুর্শেদ -কৃত স্বরলিপি]
- সন্ [ইদ্রিস আলী-কৃত স্বরলিপি]