এসো এসো পাহাড়ি ঝর্না মেঘ সজল কাজল বর্ণা (esho esho pahari jorna megho sojol kajol borna)
এসো এসো পাহাড়ি ঝর্না মেঘ সজল কাজল বর্ণা
এসো জল ছিটিয়ে ফুল ফুটিয়ে এসো॥
উপল নুড়িতে কাঁকন চুড়িতে
রিনি ঠিনি ছন্দে বন্য আনন্দে এসো
এসো ছলছল ঝলমল আঁচল লুটিয়ে এসো॥
তৃষ্ণায় ডাকে কূলে কূলে হরিণী
আনো তৃষ্ণার জল নির্ঝরিণী।
ফুলবনে ভ্রমর দল জুটিয়ে এসো॥
এসো তপ্ত ধরার বক্ষে, শান্তি ধারা আনো চক্ষে
শীতল হোক খরতর বায়ু, নির্জীব প্রান্তরে আনো পরমায়ু
এসো পাষাণ-কারার ঘুম টুটিয়ে এসো॥
- ভাবসন্ধান: এটি একটি প্রকৃতি পর্যায়ের জাগতিক গান। কবি এই গানে ঋতুবৈচিত্র্যকে সাথি করে কোনো এক পাহাড়ি ঝর্নার প্রবহমান ধারাকে কল্যাণীরূপে আহবান করেছেন।
গানের শুরুতে তিনি সজল কালো মেঘবর্ণের এই পাহাড়ি ঝর্নাকে আহ্বান করেছেন নান্দনিক মুগ্ধতায়। কবির প্রত্যাশা, বর্ষার প্রবল জলধারায় এই ঝরনার চলার পথের ধারে ফুটে উঠবে পাহাড়ি অজস্র ফুলরাশি। পাহাড়ের উচ্ছ্বল কন্যারূপী এই ঝর্নার ছোটো-বড় পাথুরে বন্ধুর চলার পথ মুখরিত হবে, তার কাঁকনের সুললিত ধ্বনিময় ছন্দে। তার এই চলার ছন্দের অবাধ আনন্দে ধ্বনিত হবে নৃত্যের রিনিঠিনি ধ্বনিসৌন্দর্য।
গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন জল-পিয়াসী হরিণীদের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে তৃষ্ণাকাতর হাহাকার, তখন কবি তৃষ্ণানিবারণী জলধারা হিসেবে প্রবাহিত হওয়ার জন্য এই ঝর্নাকে আহবান করেছেন। কবি প্রত্যাশা করেন, পাহাড়ি এই ঝর্নার করুণায় তার দুই পাড় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে। সেই সাথে ছুটে আসবে মৌ-পিয়াসী ভ্রমরের দল। তপ্ত পৃথিবীর ভূমি ও বায়ু যখন প্রচণ্ড দাপদাহে সজীব পাহাড়ি প্রান্তর যখন নির্জীব হয়ে যাবে, কবি তখন এই ঝর্নার প্রাণদায়িনী জলধারাকে তৃষ্ণানিবারণী হিসেবে প্রত্যাশা করেছেন। পাহাড়ের পাষাণ কারাগারের ঘুমন্ত এই পাহাড়ি জলকন্যা, জগতের কল্যাণের জন্য প্রবল বেগে নেমে আসুক, এই গানের উপসংহারে কবি এই প্রত্যাশ্যাই ব্যক্ত করেছেন। - রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৮) মাসে, টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪২ বৎসর ১১ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ৪২০। পৃষ্ঠা ১৩০]
- রেকর্ড: টুইন। মে ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৮)। এফটি ১৩৫৮৪। শিল্পী: বীণা দত্ত। [শ্রবণ নমুনা]
- নাটক: 'মদিনা'। [নজরুল রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ অষ্টম খণ্ডে [১২ই ভাদ্র ১৪১৫, ২৭শে আগষ্ট ২০০৮। মদিনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চদশ খণ্ড। নবম গানL নবম গান। ভাদ্র ১৪০৩। আগষ্ট ১৯৯৬। তৃতীয় গান। রেকর্ডে বীণা দত্ত-এর গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। [নমুনা]
- সুরকার: চিত্ত রায়।
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (জাগতিক, ঝর্না)
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: হ্মপা