এসো কল্যাণী চির-আয়ুষ্মতী (esho kallani chiro-ayushmoti)

এসো কল্যাণী চির-আয়ুষ্মতী।
তব নির্মল করে ভবন-প্রদীপ জ্বালো জ্বালো জ্বালো সতী॥
মঙ্গল-শঙ্খ বাজাও বাজাও সুমঙ্গলা
সকল অকল্যাণ সকল অমঙ্গল কর দূর (শুভ) সমুজ্জ্বলা!
এ মাটির কুটিরে দূর আকাশের অরুন্ধতী॥
এসো লক্ষ্মী গৃহের আঁকো অঙ্গনে মঙ্গল আল্‌পনা
তব পুণ্য-পরশ দিয়ে ধূলি-মুঠিরে কর গো সোনা,
তুমি দেবতার শুভ বর মূর্তিমতী॥
স্নান-শুদ্ধা তুমি পূজা-দেউলে যবে কর আরতি,
আনত আকাশ যেন তব চরণে করে প্রণতি।
        তব কুণ্ঠিত গুণ্ঠন-তলে
        চির শান্তির ধ্রুবতারা জ্বলে,
সংসার অরণ্যে ধ্যান-মগ্না তুমি তপতী॥

  • ভাবসন্ধান: এই গানটিতে সনাতন হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিতে বর্ণিত বশিষ্ঠ মুনির স্ত্রী অরুন্ধতী প্রতি ভক্তি নিবেদিত হয়েছে। উল্লেখ্য, পতিভক্তিতে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়া ছিলেন এই কারণে, অগ্নিকে কামনা করে স্বাহা এর রূপ ধরতে ব্যর্থ হনমৃত্যুর তিনি নক্ষত্ররূপে বশিষ্ঠের পাশে অবস্থান করছেন হিন্দু বিবাহে কুশণ্ডিকাকালে মন্ত্র উচ্চারণের সময় নববধূকে এই নক্ষত্র দেখানো হয়উল্লেখ্য, জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই নক্ষত্রটিকে সপ্তর্ষিমণ্ডল (Ursa Major) নামক নক্ষত্রমণ্ডলে বশিষ্ট নক্ষত্রের পাশে নির্দেশিত করা হয়। [অরুন্ধতী (নক্ষত্র)]

    এই গানের প্রথমাংশে অরুন্ধতীর কাছে সংসারে অমঙ্গল দূরকারিণী দেবীর স্থানে বসিয়ে কল্যাণ কামনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়াংশে অরুন্ধতীর কল্যাণময়ী রূপের বর্ণা করা হয়েছে।

    এই গানের শুরুতে নক্ষত্ররূপিণী সতী অরুন্ধতীকে কল্যাণী চির-আয়ুষ্মতী নামে আহ্বান করা হয়েছে। যেন তিনি দূর নক্ষত্রলোক থেকে মর্তলোকের মাটির কুটিরে, তাঁর পবিত্র হাতে ভবন-প্রদীপ প্রজ্বলিত করেন মঙ্গলদীপ হিসেবে।  যেন তাঁর মঙ্গল শঙ্খের সুমঙ্গলা ধ্বনিতে সকল অকল্যাণ ও অমঙ্গল দূর হয়ে যায়।

    তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে লক্ষ্মীদেবীর প্রতিরূপের আসনে। যেন তিনি এই  রূপে আঁকেন গৃহাঙ্গনে মঙ্গল আল্‌পনা, যেন তাঁর পুণ্য-পরশে ধুলো মুঠি হয়ে যায় স্বর্ণরেণু।

    পৌরাণিক স্নান-শুদ্ধা এই দেবীরূপিণী অরুন্ধতী পূজা- দেউলে যখন আরতি করেন, তখন আকাশ যেন আনত হয়ে তাঁর চরণে প্রণতি জানায়। তাঁর কুণ্ঠিত ঘোমটার আড়ালে ধ্রুবতারার মতো চিরশান্তি বিরাজ করে। সংসারের সংকট-অরণ্যে যেন ধ্যানমগ্না তপতী (সূর্যকন্যা) হয়ে বিরাজ করেন।

     
  •  রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৪১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ) মাসে, গানটি গানের মালা প্রথম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ৪ মাস।
  •  গ্রন্থ:
    • গানের মালা প্রথম সংস্করণ [আশ্বিন ১৩৪১ বঙ্গাব্দ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)। ৭৯। ভজন।
    • নজরুল রচনাবলী। জন্মশতবর্ষ সংকলন ষষ্ঠ খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। গানের মালা। ৭৯। ভজন। পৃষ্ঠা ২৪০]
    • পটদ্বীপ। স্বরলিপি: নিতাই ঘটক। হরফ প্রকাশনী, এ-১২৬ কলেজ স্ট্রিট, কলকাতা-১২। ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭৭। গান সংখ্যা ১। পটদ্বীপ-ত্রিতাল। পৃষ্ঠা: ১-৩
    • পটদীপ। স্বরলিপি: নিতাই ঘটক। হরফ প্রকাশনী, এ-১২৬ কলেজ স্ট্রিট, কলকাতা-১২। ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭৭। গান সংখ্যা ১। পটদ্বীপ-ত্রিতাল। পৃষ্ঠা: ১-৩। [নমুনা]
  • শ্রবণ নমুনা: 
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: নিতাই ঘটকপটদীপ। হরফ প্রকাশনী, এ-১২৬ কলেজ স্ট্রিট, কলকাতা-১২। ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭৭। গান সংখ্যা ১। পটদ্বীপ-ত্রিতাল। পৃষ্ঠা: ১-৩। [নমুনা]
     
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বন্দনা। অরুন্ধতী
  • সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।