এসো বঁধু ফিরে এসো, ভোলো ভোলো অভিমান (esho bodhu fire esho, bholo bholo obhimaan)
এসো বঁধু ফিরে এসো, ভোলো ভোলো অভিমান।
দিব ও-চরণে ডারি' মোর তনু মন প্রাণ॥
জানি আমি অপরাধী
তাই দিবানিশি কাঁদি',
নিমেষের অপরাধের কবে হবে অবসান॥
ফিরে গেলে দ্বারে আসি'
বাসি কিনা ভালোবাসি,
কাঁদে আজ তব দাসী ─ তুমি তার হৃদে ধ্যান॥
সে-দিন বালিকা-বধূ
শরমে মরম-মধু,
পি'য়াতে পারিনি বঁধু ─ আজ এসে কর পান॥
ফিরিয়া আসিয়া হেথা
দিও দুখ দিও ব্যথা,
সহে না এ নীরবতা ─ হে দেবতা পাষাণ॥
- ভাবার্থ: গানটি শৃঙ্গার রসের দাম্পত্য বিরহ-অভিমানের ভাবাবেশ রচিত। গানটিতে কবি মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বঁধু (বন্ধু), ডারি' (নিবেদন), পিয়াতে (পান করাতে) ব্যবহার করেছেন। আবার সেকালের একই ভাবধারায় স্বামীকে দেবতা এবং নিজেকে তার দাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে গানটিতে উদ্ভাসিত হয়েছে মধ্যযুগীয় বাংলা কাব্যের ভাব ও ভাষার সৌরভ।
মূলত গানটি ব্যক্ত করা হয়েছে- স্বামীর কাছে নব- বিবাহিতার ব্যরথ নিবেদন এবং সেই কারণে স্বামীর অভিমানে দূরে চলে যাওয়ার মনবেদনার কথা। আখ্যানধর্মী এই গানটির স্থায়ী ও অন্তরাগুলোতে পাওয়া যায় বিষয়ের খণ্ড খণ্ড রূপের গ্রন্থানায়- কথামালার মতো। আখ্যানের শুরুতেই এই দম্পতির মান-অভিমানের কারণ পাওয়া যায় না। অনেকটা ফ্ল্যাস-ব্যাকের মতো বিষয়টি উঠে এসেছে- তৃতীয় অন্তরাতে। অনুতপ্ত বধু তার নিমেষের অপরাধের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে- 'সেদিন সে অল্পবয়সী তথা বালিকাবধু ছিল, তাই লজ্জায় তার হৃদয়ের প্রেমমধু তার স্বামীর কাছে নিবেদন করতে পারে নি।
গানটির স্থায়ী এবং অপর তিনটি অন্তরাতে বর্ণিত হয়েছে- তার স্বামীর অভিমানে দূরে চলে যাওয়া, তার নিমেষের ভুলের স্বীকার এবং এই কারণে মনোবেদনা, অনুতপ্ত হৃদয়ে স্বামীর কাছে নিজেকে দেহমনে সম্পর্ণের অঙ্গীকারের কথা।
গানটির স্থায়ীতে উঠে এসেছে অভিমানে দূরে চলে যাওয়া স্বামীর কাছে স্ত্রীর তার ভুল স্বীকারপূর্ব আকুল আবেদন- যেন সে (স্বামী) সকল অভিমান ভুলে তার কাছে ফিরে আসে। এই বধু অতীতের মতো আর ভুল না করে তার (স্বামীর) কাছে দেহ-মনের নিঃশর্ত করেবে এমন সম্পর্পণের অঙ্গীকার করছে সে। গানটির প্রথম অন্তরাতে বধু আগের নিমেষের ভুল স্বীকার করেছে। এই কারণে সে অহর্নিশি বিরহবেদনায় ক্রন্দনশীলা। দ্বিতীয় অন্তরাতে বধুর কাতরতা তীব্রতর হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। কারণ, তার স্বামী দূরে চলে গেলেও একবারের জন্য হলেও তার দ্বারে এসেও ফিরে গিয়েছিল। মধ্যযুগীয় কাব্যরীতিতে এই অন্তরাতে এই বধু প্রভু বিহনে অসহায়া। তাই এ্খানে সে নিজেকে দাসী হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তৃতীয় অন্তরায় এই মান-অভিমানের কারণ ব্যক্ত করার পর, চতুর্থ বা শেষ অন্তরাতে- এই বধু স্বামীর দেওয়া সকল ব্যথা গ্রহণ করার প্রত্যয় প্রকাশ করেছে। বধুর সর্বশেষে নিবেদন রেখেছে সাড়া না দেওয়া স্বামীকে অভিমানভরে পাষাণ দেবতার সাথে তুলনা করেছে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। 'গুলবাগিচা ' গীতি-সংকলনের প্রথম সংস্করণে [১৩ আষাঢ় ১৩৪০, ২৭ জুন ১৯৩৩] গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ১ মাস।
- গ্রন্থ:
- গুলবাগিচা
- প্রথম সংস্করণ [১৩ আষাঢ় ১৩৪০, ২৭ জুন ১৯৩৩। ইমন মিশ্র-দাদরা। পৃষ্ঠা: ২৭]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংকলন। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। গুল-বাগিচা। গান সংখ্যা ২২। ইমন মিশ্র-দাদরা।পৃষ্ঠা: ২৩৮]
- গুলবাগিচা
- রেকর্ড: মেগাফোন [নভেম্বর ১৯৩৫ (কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৪২)। জেএনজি ২২৫। শিল্পী: আঙ্গুরবালা (টেঁপি)] শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, একচল্লিশতম খণ্ড, অগ্রহায়ণ ১৪২৪] গান সংখ্যা ৪। পৃষ্ঠা: ২৯-৩১ [নমুনা]
- পর্যায়: