এসো শঙ্কর ক্রোধাগ্নি হে প্রলয়ঙ্কর (esho shongkor krodhagni)

এসো শঙ্কর ক্রোধাগ্নি হে প্রলয়ঙ্কর।
রুদ্রভৈরব! সৃষ্টি সংহর, সংহর॥
জ্ঞান-হীন তমসায় মগ্ন পাপ-পঙ্কিলা
বিশ্ব জুড়ি' চলে শিবহীন যজ্ঞের লীলা,
শক্তি যথায় করে আত্ম-বিসর্জন ঘৃণায়-
ধ্বংস কর সেই অশিব-যজ্ঞ— অসুন্দর॥
যথা দেবী শক্তি— নারী অপমান সহে
গ্লানিকর হানাহানি চলে ধরমের মোহে,
হানো সংঘাত, অভিসম্পাৎ সেথা নিরন্তর॥

  • ভাবসন্ধান: হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে জগৎঘটক রচিত উদাসী ভৈরব নাটিকায় ব্যবহৃত নজরুলের রচিত সূচনা সঙ্গীত। এই কাহিনি মতে দক্ষ একটি যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু জামাতা শিবের প্রতি বিদ্বেষ বসত, শিব এবং কন্যা সতীকে এই যজ্ঞে আমন্ত্রণ করেন নি। সতী তা জানতে পেরে অযাচিতভাবে এই যজ্ঞে যাওয়ার অনুমতি লাভের জন্য শিবের কাছে যান। এই সময় শিব এ সময় ধ্যান মগ্ন ছিলেন। তাই তিনি শিবের ধ্যান ভাঙার জন্য যোগিনীদের সাথে নিয়ে ধ্যানমগ্ন শিবকে উপস্থিত হন।

    সতী! সতী! তোমার দেহত্যাগের প্রায়শ্চিত্ত হবে দক্ষের যজ্ঞ বিনষ্টে—দক্ষের ছিন্ন মুণ্ডে হ'ক ঐ যজ্ঞের আহুতি দান। দম্ভী দক্ষ নিজ কৃত-কর্মের ফল ভোগ করুক। জাগো, জাগো, রুদ্র ভৈরব জাগো। আজ কোটি সূর্যের তেজে ব্রহ্মাণ্ড জাগিয়ে দাও। ছারখার হ'ক স্বর্গ-মর্ত্ত-পাতাল-বিশ্ব যাক রসাতলে।     এই গানে ক্রোধান্বিত প্রলয়ঙ্কর রুদ্রভৈরবকে আহ্বান করে সৃষ্টিকে ধ্বংসের আহ্বান করা হয়েছে। শিব সত্য ও সুন্দরের প্রতীক। শিবের অবজ্ঞার অর্থই হলো সত্য সুন্দরের অবজ্ঞা। বিশ্বজুড়ে যে অশিবের যজ্ঞ চলছে, তাকে ধ্বংস করার জন্য রুদ্রভৈরবকে আহ্বান করা হচ্ছে এই গানের ভিতর দিয়ে। বিশ্বজুড়ে অশিব শক্তি, শক্তিরূপিণী নারী সত্তাকে অপমান করছে। চলেছে ধর্মের নামেও গ্লানিকর হানাহানি। অশুভ শক্তির ধ্বংসের মধ্য দিয়ে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা পাক, এই ইচ্ছাই গানটির আভোগে উপস্থাপিত হয়েছে ।

ধ্যানভঙ্গের পর শিব দুর্গাকে অনাহূতভাবে দক্ষযজ্ঞে যেতে নিষেধ করেন। দুর্গা সে নিষেধ উপেক্ষা করে দক্ষযজ্ঞে যান। দক্ষযজ্ঞে সতীর সামনে শিবের নিন্দা করলে, সতী দেহত্যাগ করেন। এই সংবাদটি শিবানী ভৈরবী শিবকে এই গানের মাধ্যমে শোনান। এরপর শিব দক্ষের শাস্তি দেওয়ার জন্য তাঁর প্রলয়ঙ্করী শক্তিকে জাগ্রত করেন। কাজী নজরুল ইসলাম 'উদাসী ভৈরব' নাটিকায় এই শক্তিকে আহ্বান করেছেন যে ভাবে, তা হলো-

  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। গানটি কাজী নজরুল ইসলাম, জগৎ ঘটক রচিত উদাসী ভৈরব নামক নাটকের জন্য লিখেছিলেন। নাটিকাটি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ নভেম্বর (রবিবার, ২৬ কার্তিক ১৩৪৬), প্রাতঃকালীন অধিবেশনে ৯.১৫-৯.৫৯ মিনিট পর্যন্ত, কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৫ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • উদাসী ভৈরব (নাটিকা)। দ্বিতীয় দৃশ্য। চতুর্থ গান। রুদ্র ভৈরবীর গান।
    • নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্‌ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০০৩। গান সংখ্যা ১১৯৬]
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১১৯৬।
  • পত্রিকা: বেতার জগৎ (পত্রিকা), ১০ম বর্ষ ২১শ সংখ্যা। উদাসী ভৈরব। ১ নভেম্বর, ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ৮১৫। [নমুনা]
     
  • বেতার: উদাসী ভৈরব। নাটিকা। দ্বিতীয় দৃশ্য। চতুর্থ গান। কলকাতা বেতার কেন্দ্র [১২ নভেম্বর ১৯৩৯ (রবিবার, ২৬ কার্তিক ১৩৪৬), প্রাতঃকাল ৯.১৫-৯.৫৯ মিনিট। নাট্যকার জগৎ ঘটক। পরিকল্পনা, গীত রচনা ও সংগঠনা- নজরুল ইসলাম। শিবানী ভৈরবের গান। শিল্পী- গীতা মিত্র
  • সুরকার: নজরুল ইসলাম
  • স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক। [নবরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)] [নমুনা]
     
  • পর্যায়
    • বিষয়াঙ্গ: নাট্যগীতি। ভক্তি (হিন্দুধর্ম, প্রার্ধনা)
    • সুরাঙ্গ: ধ্রুপদাঙ্গ
    • রাগ: রুদ্র ভৈরব (নজরুল-সৃষ্ট রাগ)। এই বিষয়ে জগৎ ঘটক তাঁর স্বরলিপি গ্রন্থ 'নবরাগ' -এ লিখেছেন- 'বহুকাল পূর্বের কথা। উদাসী ভৈরব নামে একখানি নাটিকা বেতারে অভিনীত হবার জন্যে কবি আমাকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন— এবং এর ছয়খানি গান তিনি রচনা ও তাতে সুরারোপ করেন। সুরগুলি রাগ-ধর্মী ও তাঁর সৃষ্ট নবরাগ। বাসন্তী বিদ্যাবীথির প্রয়োজনীয় নাটিকাটি বেতারে সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত হয়েছিল। ... গানগুলি অরুণ-ভৈরব, আশা-ভৈরব, শিবানী-ভৈরবী, রুদ্র-ভৈরব, যোগিনী ও উদাসী ভৈরব।'
    • তাল: সুরফাঁকতাল
    • গ্রহস্বর: সা।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।