এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে (esho sharod pratero pothik)

এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে।
এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে॥
দলি,শাপলা শালুক শতদল এসো রাঙায়ে তোমার পদতল
নীল লাবনি ঝরায়ে ঢলঢল এসো অরণ্য পর্বতে॥
এসো ভাদরের ভরা নদীতে ভাসায়ে কেতকী পাতার তরণী
এসো বলাকার রঙ পালক কুড়ায়ে বাহি' ছায়াপথ-সরণি।
শ্যাম শস্যে কুসুমে হাসিয়া এসো হিমেল হাওয়ায় ভাসিয়া
এসো ধরণীরে ভলোবাসিয়া দূর নন্দন-তীর হতে॥

  • ভাবার্থ: যেনো কোনো এক পর্যটককে কবি শরতের সৌন্দর্য-বৈচিত্র্যকে উপভোগের জন্য- আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এই আগমনী গানে। বিচিত্র পথে না এলে শারদ প্রভাত যেন অদেখা রয়ে যায়। এই আগমনী গানের পথিক কবির মনোলোকের শরত। তার চলার পথ হলো- শরতের প্রবহমান রূপবৈচিত্রের ধারা।

    শরতের এই পথিক কল্প-বাস্তবতার শৈল্পিক জগতে বাধা। তাকে কবি আহ্বান করেছেন নানাবিধ ধারায়। এই গানের স্থায়ীতে তিনটি ধারায় পথিকেকে আহ্বান করা হয়েছে।  প্রথমটি শারদ-প্রাতের শিউলি বিছানো পথে, দ্বিতীয়টি  শিশির-ধৌত পায়ে, তৃতীয়টি প্রভাতী সূর্যের অগ্রযাত্রার রথে। উল্লেখ্য, ঋগ্বেদের প্রথমমণ্ডলের ৫০ সূক্তে এই অশ্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে- হরিৎ নামক সপ্ত অশ্ব রথে তিনি চলেন এবং জ্যোতি তার কেশরূপে প্রকাশিত হয়। তিনি অন্ধকারকে দূর করেন এবং জীবের পাপ ও রোগের বিনাশ করেন। এই সূত্রে এই গানের অরুণ-কিরণ-রথ যাত্রীক কবি আহ্বান করেছেন- পাপ ও রোগের বিনাশ ক কল্যাণ্যীয় রূপে, স্নিগ্ধ-শুভ্র লাবণ্যময় সৌন্দর্যে।

    এই গানের অন্তরা সঞ্চারী ও আভোগে কবি মেলে ধরেছেন শরত-সন্দর্সনের নানা পথ। এই পরিভ্রমণের বিচিত্র পথে কখনো তার পদযুগল শরতের শাপলা, শালুক, পদ্মের নীলাভ শুভ্র রঙে রঞ্জিত হবে, এবং  তার চলার পথে সে পুষ্প-আভায় রাঙিয়ে দেবে অরণ্য পর্বতকে। চলার পথে পথিক ভাদরের ভরা নদীতে কেয়া পাতার তরণী ভাসিয়ে দেবে, ছায়াপথের সরণি ধরে বলাকার পালক রঙ ছড়িয়ে ভেসে আসবে সে। দূর স্বর্গের নন্দনবন হতে এই পৃথিবীকে ভালোবসে- শরতের শ্যাম শস্যে, কুসুমে হিমেল হওয়ায় ভেসে পথিক আসবে।  

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল 'গুলিস্তাঁ' পত্রিকার 'শ্রাবণ ১৩৪০' (জুলাই-আগষ্ট ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যায়। এই সময় এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ১ মাস।
     
  • পত্রিকা:  'গুলিস্তাঁ'। 'শ্রাবণ ১৩৪০' (জুলাই-আগষ্ট ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ)।
  • রেকর্ড: এইচএমভি। মার্চ ১৯৩৪ (১৭ ফাল্গুন- ১৭ চৈত্র ১৩৪০)নম্বর এন ৭২০৩। শিল্পী: অনিমা বাদল [শ্রবণ নমুনা]
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: রশিদুন্ নবী [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, ষোড়শ খণ্ড। প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট আশ্বিন ১৪০৪/অক্টোবর ১৯৯৩। ষষ্ঠ গান] [নমুনা]
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (ঋতু, শরৎ)
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।