এসো হে সজল শ্যাম-ঘন দেয়া (esho hey sojol-shyam ghono deya)
এসো হে সজল শ্যাম-ঘন দেয়া
বেণু-কুঞ্জ-ছায়ায় এসো তাল-তমাল বনে
এসো শ্যামল ফুটাইয়া যূথী কুন্দ নীপ কেয়া॥
বারিধারে এসো চারিধার ভাসায়ে
বিদ্যুৎ ইঙ্গিতে দশদিক হাসায়ে
বিরহী মনে জ্বালায়ে আশার আলেয়া
ঘন দেয়া, মোহনীয়া, শ্যাম-পিয়া॥
শ্রাবণ বরিষণ হরষণ ঘনায়ে
এসো নব ঘন শ্যাম নূপুর শুনায়ে।
হিজল তমাল ডালে ঝুলন ঝুলায়ে
তাপিতা ধরার চোখে অঞ্জন বুলায়ে
যমুনা স্রোতে ভাসায়ে প্রেমের খেয়া
ঘন দেয়া, মোহনীয়া, শ্যাম-পিয়া॥
- ভাবার্থ: বর্ষাঋতুর এই গানটিতে সরস বর্ষার নিটল রূপের সাথে মিশে আছে মানবমনের শৃঙ্গার রস। তাই গানটি হয়ে উঠেছে প্রকৃতি ও প্রেম পর্যায়ের।
বর্ষার আবাহনের মধ্যে দিয়ে এই গানের অবতারণা করা হয়েছে। বেণুবনের ছায়ায়, তাল-তমাল বনে- যূথী, কুন্দ, নীপ, কেয়া-কে প্রস্ফুটিত করে শ্যাম-ঘন দেওয়া শ্যামল ভূমিতে নেমে আসুক এই প্রত্যাশা গানটির স্থায়ীতে পাওয়া যায়। মূলত স্থায়ীর এই কথন- বর্ষার এই আগমনী গানের ভূমিকা।
অন্তরার উপস্থাপন করা হয়েছে সরস বর্ষার অংশভাগী করে প্রণয়ের বিরহ-মিলনের প্রত্যাশা। অন্তরার প্রথমাংশে বজ্র-বিদ্যুতে উদ্ভাসিত এবং বিপর্যস্ত প্লাবিত জনপদে- বর্ষার ভয়ঙ্কর সুন্দর রূপকে আহ্বান করা হয়েছে। দ্বিতীয়াংশে উপস্থাপন করা হয়েছে- সঙ্গীহীন বিরহীর মনোজ্বালা প্রশমনের প্রত্যাশার কথা। এই প্রত্যাশা হয়তো অলীক, তাই একে বলা হয়েছে আশার আলেয়া। বিরহী আশা করে- হয়তো এমন সঙ্গহীন দশায়, বিরহীর কাছে ফিরে আসবে তার প্রেমিকা- শ্যাম-পিয়ার (রাধা) মতো, মোহনীয়া বেশে।
সঞ্চারী ও আভোগে পাওয়া যায় সরস বর্ষা এবং শৃঙ্গার রসের মোহনীয় রূপ। কবি কামনা করেন- বর্ষণমুখর শ্রাবণ-উৎসবে বর্ষা আসুক শ্যামরূপী বর্ষা, নূপুরের ধ্বনি শুনিয়ে। বর্ষা আসুক হিজল-তমাল ডালে ঝুলনের দোলায়, তপ্ত প্রকৃতিতে বর্ষার প্রণয়সঞ্চাত আবেশ ছড়িয়ে দিক। প্রেম-যমুনার স্রোতে প্রেমের খেয়া ভাসিয়ে বর্ষা আসুক শ্যাম-পিয়ার (রাধা) মতো, মোহনীয়া বেশে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪৩) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি এই গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ১ মাস।
- রেকর্ড: এইচএমভি [জুলাই ১৯৩৬ (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪৩)। এফটি ৯৭৪৪। শিল্পী: ধীরেন দাস ও ইন্দুবালা। সুর ধীরেন দাস] [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: নীলিমা দাস। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, বত্রিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। ফাল্গুন ১৪১৫। ফেব্রুয়ারি ২০০৯] দ্বিতীয় গান। রেকর্ডে ইন্দুবালা ও ধীরেন দাসের গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। [নমুনা]
- পর্যায়: