ঐ নীল গগনের নয়ন-পাতায় নাম্ল কাজল কালো মায়া। (oi nil gogoner noyon-patay)
ঐ নীল গগনের নয়ন-পাতায় নাম্ল কাজল কালো মায়া।
বনের ফাঁকে চমকে বেড়ায় তারি সজল আলো ছায়া॥
তমাল তালের বুকের কাছে
কে ব্যথিত দাঁড়িয়ে আছে
ভেজা পাতায় কাঁপে গো তার আদুল ঢলঢল কায়া॥
তার অতল কালো ছায়া দোলে শাল পিয়ালের শ্যামলিমায়,
আমলকি-বন ঝিমায় ব্যথায় ঘনায় কাঁদন গগন-সীমায়।
তার বেদনাই ভরেছে দিক
ঘর-ছাড়া হায় এ কোন্ পথিক,
আকাশ-জোড়া স্তব্ধ তারি অসীম রোদন বেদন-ছায়া॥
- ভাবার্থ: আসন্ন বর্ষার সজল প্রকৃতিকে কবি বেতানার্ত ক্রন্দসীর চিত্ররূপে উপস্থাপিত হয়েছে এই গানে। তাই আকাশের সজল কাজল কালো মেঘকে কবি, বর্ষার আগমনে নীলনয়না আকশের চোখের পাতায় নেমে আসা বেদনার সাথে তুলনা করেছে। তিনি বনের ফাঁকে ফাঁকে জলভরা মেঘের আলো-ছায়ার খেলায় বেদনার চমক হিসেবে দেখেছেন। যেন আলো-ছায়ার খেলায়, তাল-তমালের বনে বেদনার্ত কেউ আদুল গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেজা পাতায় সে বেদনায় কম্পিত হয়।
বর্ষার অতল কালো বেদনার্ত ছায়া দোলে শাল-পিয়ালের শ্যামলিমায়। তারই প্রভাবে আমলকি বনও যেন অজানিত ব্যাথায় ঝিমিয়ে পড়ে। গগনসীমায় জমে থাকা মেঘরাশি দেখে কবির কাছে ঘনীভূত গভীর বেদনা মনে হয়। আর আকাশে বিরাজিত অসীম রোদন-বেদনায় প্রকৃতি যেন স্তদ্ধ হয়ে থাকে।
- রচনাকাল ও স্থান: বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে 'ছায়ানট' কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণে এই গানটি যখন অন্তর্ভুক্ত হয়। এর শিরোনাম হয় 'স্তব্ধ বাদল'। এই গ্রন্থে রচনাটির নিচে 'কুমিল্লা/ আষাঢ় ১৩২৯' লেখা আছে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৩ বৎসর ১ মাস।
- গ্রন্থ:
- ছায়ানট । প্রথম প্রকাশ ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২৫ (৬ আশ্বিন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ)। শিরোনাম: স্তব্ধ বাদল।
এই কবিতার অংশবিশেষে সুরারোপ করেছিলেন। গানের এই রূপটি পাওয়া যায়- 'হারানো গানের খাতা' নামক সংকলনে। - হারানো গানের খাতা।
- ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে প্রকাশ করেছিল নজরুল ইন্সটিটিউট। [১৮। পৃষ্ঠা ৪৪] [গান-২৫১১]
- নজরল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বাদশখণ্ড। হস্তলিপি। বাংলা একাডেমী ঢাকা। ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, ২৫ মে ২০১১। পৃষ্ঠা: ৬৮। [নমুনা]
- ছায়ানট । প্রথম প্রকাশ ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২৫ (৬ আশ্বিন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ)। শিরোনাম: স্তব্ধ বাদল।
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি, বর্ষা
- সুরাঙ্গ: ঠুমরি