ও কালো শশী রে, বাজায়ো না আর বাঁশি রে (o kalo shoshi re , bajayo na ar bashi re)
ও কালো শশী রে, বাজায়ো না আর বাঁশি রে।
বাঁশি শুনিতে আসি না আমি, জল নিতে আসি হে॥
আঁচল দিয়ে মুছি বন্ধু কাজলেরি কালি,
যায় না মোছা তোমার কালি লাগলে বনমালী;
তোমার বাঁশির সুরে ভেসে গেল কত রাধার মুখের হাসি রে॥
কাল নাগিনীর ফণায় নাচো, বুঝবে তুমি কিসে,
কত কুল-বধূ মরে ঐ বাঁশরির বিষে (বন্ধু)
ঘরে ফেরার পথ হারায়ে ফিরি তোমার পায়ে পায়ে,
জলের কল্সি জলে ডোবে, আমি আঁখি জলে ভাসি রে॥
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৯) মাসে সেনোলা রেকর্ড কোম্পানি থেকে এই গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪৩ বৎসর ৬ মাস।
- ভাবসন্ধান: এই গানে কোন এক কৃষ্ণ-অনুরাগিণী তাঁর কৃষ্ণ-প্রেমের অনুরাগ-বিরাগের অন্তর্দ্বন্দ্বে আশা-দুরাশাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই অনুরাগিণী জানেন তাঁর প্রেমাকাশে কৃষ্ণ চন্দ্রের মতোই মোহময়, পরক্ষণে ভাবেন কৃষ্ণের প্রেমে রয়েছে কলঙ্কের কালিমা। কৃষ্ণের কালো রূপের মতোই সে প্রেমে রয়েছে দুরাশার অন্ধকার। তাই কৃষ্ণকে সম্বোধন করা হয়েছে কালো শশী রূপে। এই অনুরাগিণী ভয় পান কৃষ্ণের বাঁশীর মোহনীয় সুর-ধ্বনিকে। তাই তিনি যমুনাতে জল আনার জন্য যেতে চান না, পাছে সব জেনে বুঝে তিনি কৃষ্ণের প্রেম আসক্ত হয়ে পড়েন।
এই অনুরাগিণী জানেন কাজলের কালো রঙ আঁচল দিয়ে মুছে ফেলা যায়, কিন্তু কৃষ্ণ-প্রেমের কলঙ্কের কালিকে মুছে ফেলা যায় না। এমনি করে কত রাধারূপী ব্রজনারীর মুখের হাসি ভেসে গেছে ঐ বাঁশীর মোহনীয় প্রেম-আহ্বানে।
কৃষ্ণ কালিয় নামক একটি বিষাক্ত সাপকে হত্যা করেছিলেন তার মাথায় নেচে নেচে। কৃষ্ণের সর্পবিষ-রূপী বাঁশির ধ্বনির দংশনে কত কুলবধূর সর্বনাশ হয়েছে। তারপরেও এই অনুরাগিণী কৃষ্ণের প্রেমের মোহজালে পড়ে- পথ হারায়ে ঘুরে বেড়ান তাঁরই প্রেম-পথে। ব্যথাতুর অনুরাগিণীর জলের কলসি যমুনার জলে ডোবে, আর অনুরাগিণী কৃষ্ণ-বিরহ-জ্বালায় আঁখি জলে ভাসেন।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৬৩৫]
- অগ্রন্থিত গান: নজরুল রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ (একাদশ খণ্ড), বাংলা একাডেমী। ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৭, ২৫শে মে ২০১০। গান সংখ্যা ৮৭। পৃষ্ঠা: ৪১-৪২।
- রেকর্ড: সেনোলা। ডিসেম্বর ১৯৪২ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৯)। কিউএস ৫৯৩। শিল্পী: শৈল দেবী [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- নীলিমা দাস। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, একত্রিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। ফাল্গুন, ১৩৯৭ বঙ্গাব্দ/ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ] সপ্তম গান। শৈল দেবী-র গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। [নমুনা]
- নীলিমা দাস। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, একত্রিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। ফাল্গুন, ১৩৯৭ বঙ্গাব্দ/ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ] সপ্তম গান। শৈল দেবী-র গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব। কৃষ্ণ। অন্তর্দ্বন্দ্ব
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: সা