ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি (o bhai khati sonar cheye khati)
ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি
আমার দেশের মাটি॥
এই দেশেরই মাটি জলে
এই দেশেরই ফুলে ফলে
তৃষ্ণা মিটাই মিটাই ক্ষুধা পিয়ে এরি দুধের বাটি॥
এই মায়েরই প্রসাদ পেতে
মন্দিরে এর এঁটো খেতে
তীর্থ ক'রে ধন্য হতে আসে কত জাতি।
ও ভাই এই দেশেরই ধূলায় পড়ি'
মানিক যায় রে গড়াগড়ি
ও ভাই বিশ্বে সবার ঘুম ভাঙালো এই দেশেরই জিয়ন-কাঠি॥
এই মাটি এই কাঁদা মেখে
এই দেশেরই আচার দেখে
সভ্য হ'লো নিখিল ভুবন দিব্য পরিপাটি।
ও ভাই সন্ন্যাসিনী সকল দেশে
জ্বাল্লো আলো ভালোবেসে
মা আঁধার রাতে এক্লা জাগে আগ্লে রে এই শ্মশান-ঘাটি॥
- ভাবার্থ: মাতৃরূপিণী বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বাংলার মাটি ও মানুষের অহঙ্কারের যুগলবন্দীতে গাঁথা এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে স্বদেশ ও প্রকৃতির চিত্রময় রূপ। কবির কাছে সুজল-সুফলা এই দেশের মাটি সোনার চেয়ে মহার্ঘ। কারণ এই মাটির গুণেই উৎপন্ন ফুল ও ফসলে, মন ও দেহের কল্যাণ আনে, এই দেশের দুগ্ধশ্রাবী গাভীর কল্যাণে তৃষ্ণা ও ক্ষুধা নিবারিত হয়।
এই দেশ কবির কাছে মাতৃরূপিণী। তাই দেশই হলো সে মায়ের মন্দির। এই তীর্থরূপী মায়ের এই পবিত্র মন্দিরের প্রসাদ গ্রহণ করে ধন্য হওয়ার জন্য কত জাতির মানুষ এদেশ পরিভ্রমণ করে।
এই দেশের ধূলামাটিতে কত শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীর জন্ম হয়েছে। এরাই তাঁদের অমৃত দর্শনের জিয়নকাঠি, অজ্ঞনতার মোহে ঘুমিয়ে থাকা বিশ্ববাসীকে জাগিয়ে তুলেছে। এই দেশের আচারানুষ্ঠান শিষ্টাচার দেখেই সভ্য হয়েছে বিশ্বজনেরা। সন্ন্যাসিনী রূপী এই দেশমাতা সারা দেশ জুড়ে ভালোবাসার আলো জ্বালিয়ে রাখে। অন্যায় অবিচারে সারা দেশ যখন শশ্মানঘঁটিতে পরিণত হয়, তখনো দেশমাতা তাঁর সন্তানের কল্যাণকামনায় যেন বিনিদ্র রাত্রি কাটায়।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল (চৈত্র-১৩৩৯-বৈশাখ ১৩৪০) মাসে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩ বৎসর ১১ মাস।
- গ্রন্থ:
- গুলবাগিচা
- প্রথম সংস্করণ [১৩ আষাঢ় ১৩৪০, ২৭ জুন ১৯৩৩। বাউল-লোফা। পৃষ্ঠা: ৮৪-৮৫]
- নজরুল রচনাবলী, পঞ্চম খণ্ড [বাংলা একাডেমী। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১ । গুল-বাগিচা। গান সংখ্যা ৭৩। বাউল-লোফা। পৃষ্ঠা ২৬৮]
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৯৬১। তাল: দাদরা। পৃষ্ঠা: ২৯৪-২৯৫।]
- সুরলিপি। [১৬ আগষ্ট ১৯৩৪ (বুধবার, ৩১ শ্রাবণ ১৩৪২)]। জগৎঘটক-কৃত স্বরলিপি। প্রকাশক: নজরুল ইসলাম। বাউল-লোফা। ২২ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৬৬-৬৯।
- গুলবাগিচা
- রেকর্ড: এইচএমভি [এপ্রিল ১৯৩৩ (চৈত্র-১৩৩৯-বৈশাখ ১৩৪০)। এন ৭০৯৭। শিল্পী: গোপাল সেন] [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপিকার:
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম।
- পর্যায়: