ও ভাই হাজি! কোন্‌ কাবা ঘর হজ করিয়া এলে (o bhai haji! kon kaba ghor hoj koriya ele)

        ও ভাই হাজি! কোন্‌ কাবা ঘর হজ করিয়া এলে।
        গিয়ে কি ভাই খোদায় পাওয়ার পথের দিশা পেলে॥
        খোদার ঘরের দিদার পেয়ে বল কেমন ক'রে
        ফিরে এলে দুনিয়াদারীর এই না-পাক ঘরে,
        কেউ বলেছে কি কোন্‌ কাবাতে গেলে খোদায় মেলে॥
        খেলেছিলেন নবীজী যে-মক্কা মদিনায়
        বেহোঁশ হয়ে পড়েনি কি পৌঁছিয়া সেথায়,
        কেমন ক'রে ফিরে এলে সেই মদিনা ফেলে॥
        এই দুনিয়ার কারবালাতে অধিক তৃষা আরো
        এনেছ কি আব্‌হায়াতের পানি? দিতে পারো?
 মোর  আঁধার ঘরে দিতে পারো নূরের চেরাগ জ্বেলে?

  • ভাবসন্ধান: গানটিতে ইসলাম ধর্মের ভাববাদী, আত্মজিজ্ঞাসামূলক ও আধ্যাত্মিক উপলব্ধিগত দর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে। এই দর্শনের আলোকে কবি কোনো একজন হাজিকে প্রশ্ন করছেন- যে তিনি হজ করে এসেছেন বটে, কিন্তু সত্যিই কি আল্লাহকে পাওয়ার পথের সন্ধান তিনি পেয়েছেন কিনা। খোদার পবিত্র ঘরের দিদার (কাবা ঘর দর্শন) পেয়েও এই হাজি কি করে সংসারে অপবিত্র ঘরে ফিরে এলেন। কারণ কেউ কেউ বলেন কাবা দর্শনের মধ্য দিয়ে আল্লাহর দর্শন লাভ করা যায়। ধর্ম-প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য নবিকে মক্কা- মদিনা ভ্রমণ করতে হয়েছে। মূলত এখানে মক্কা-মদিনা শুধু ভৌগোলিক স্থান নয়, বরং সেখানে নবিজির জীবনযাপন ছিল আল্লাহর পথে আত্মত্যাগে পরিপূর্ণ বিচরণ। সেখানে পৌঁছে কি খোদার প্রেমে  হাজি'র বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত হয়ে যায় না? সেই মহিমান্বিত মদিনা ছেড়ে কি করে হাজি ফিরে আসতে পারলেন, এটা কবির কাছে পরম বিস্ময়।

    এই দুনিয়া নিজেই ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধে কারবালার যুদ্ধের চেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে। কারবালার প্রান্তরে তৃষ্ণায় প্রাণ হারিয়েছিলেন অনেকে। আত্মিকলোকের সত্যের তৃষ্ণা মেটানোর মতো আবহায়াত (জীবনদায়ক জল) অমৃতময় জ্ঞানসুধা কি আনতে পেরেছেন হাজি। কবি মনে করেন অজ্ঞানতার অন্ধকার ডুবে আছে মনের ঘর। হাজি কি সেই ঘরে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে দিতে পারবেন?

     
  • রচনাকাল : গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের জুন (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৪৭) মাসে মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ডে প্রকাশ করে। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪১ বৎসর ১ মাস।  
     
  • রেকর্ড:  মেগাফোন। জুন ১৯৪০ (১৮ জ্যৈষ্ঠ-১৬ আষাঢ় ১৩৪৭)।  জেএনজি ৫৪৮২। শিল্পী: আব্দুল হামিদ
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১২৯৭। তাল: কাহারবা। পৃষ্ঠা: ৩৯৩।
     
  • সুরকার: নজরুল ইসলাম
  • পর্যায়:
    • ধর্মসঙ্গীত। ইসলাম ধর্ম। হজ ও হাজি

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।