ওমা এক্লা ঘরে ডাকব না আর দুয়ার বন্ধ ক’রে (o maa ekla ghore dakbo na ar )
ওমা এক্লা ঘরে ডাকব না আর দুয়ার বন্ধ ক’রে।
তুই সকল ছেলের মা যেখানে ডাকব মা সেই ঘরে॥
রুদ্ধ আমার একলা এ মন্দিরে,
পথ না পেয়ে যাস্ বুঝি মা ফিরে,
মোরে জ্যোতির্লোকে ঘুম্ পাড়িয়ে তাপিত সন্তানে নিয়ে
মাগো কাঁদিস্ বুকে ধ’রে॥
আমি একলা মানুষ হ’তে গিয়ে হারাই মা তোর স্নেহ,
আমি যে ঘর যেতে ঘৃণা করি মা,─ সেই তোর গেহ।
দুর্বল মোর ভাই বোনদের তুলে,
আমি দাঁড়াব মা যেদিন, চরণ মূলে।
সেদিন মা তুই আপনি এসে কোলে তুলে নিবি হেসে,
আর হারাব না তোরে॥
- ভাবসন্ধান: এই গানে মাতৃরূপিণী কোন্ দেবীর কাছে ভক্তের আকুল নিবেদন উপস্থাপিত হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তিনি যিনিই হন, তাঁকে মান্য করা হয়েছে সর্বলোকের সর্বজনের পরিত্রাণকারিণী হিসেবে। ভক্ত তাঁকে দুয়ার বন্ধ করা ঘরের নিভৃত কক্ষে স্মরণ করতে চান না। কারণ এই দেবী মাতৃরূপণী হয়ে সকল সন্তানের মনে অধিষ্ঠিতা। সবার প্রার্থনার মাঝেই তাঁর অধিষ্ঠান। তাই এই গানের ভক্ত সন্তান সবার সাথে একাসনে বসে দেবীকে ডাকতে চেয়েছেন।
ভক্তের আশঙ্কা তার রুদ্ধদ্বার মনোমন্দিরে একাকী দেবীকে ডাকলে হয়তো তিনি তাঁর কাছে আসার পথ না পেয়ে ফিরে যাবেন। একলা দেবীর আরাধনায় এই দেবী যেন এই ভক্তকে জ্ঞানের জ্যোতির্লোকের মায়াময় জগতে ঘুম পাড়িয়ে রেখে তাঁর দুঃখতাপে জর্জরিত সন্তানদের শুধু বুকে টেনে নেবেন। ফলে দেবীর শাশ্বত করুণা লাভ থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন।
ভক্ত মনে করেন তিনি যখন নিজ স্বার্থে জীবন অতিবাহিত করার জন্য তাঁর আরাধনা করেন, তখনই মাতৃস্নেহ থেকে তিনি বঞ্চিত হন। তিনি মনে করেন, যে আত্ম -অহংবোধে অন্য ঘরকে তিনি অবহেলা করেন, হয়তো দেবী সেই ঘরেই বাস করেন। তাই কবি প্রতীজ্ঞা করেছেন- সংসারে যারা দুর্বল, তাদের নিয়েই তিনি দেবীর কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। আর যেদিন তিনি তা পারবেন, সেদিনই দেবী নিজে এসে সবার সাথে তাঁকেও কোলে তুলে নেবেন সহাস্যে। তখন কেউই আর মাতৃহারা হয়ে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হবেন না।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪৪) মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ৯ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৮৮৩
- রেকর্ড: এইচএমভি। মার্চ ১৯৩৮ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪৪)। এন ১৭০৫২। শিল্পী: চিত্তরায়[শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: ইদ্রিস আলী [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, চব্বিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] তৃতীয় গান। [নমুনা]
- সুরকার: নজরুল ইসলাম
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। সাধারণ। পরম-দৈবসত্তা। আত্মনিবেদন
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: না