ওমা ত্রিনয়নী! সেই চোখ দে যে-চোখ তোরে দেখতে পায় (o maa trinoyoni ! sei chokh de je- chokh tore dekhte pay)
ওমা ত্রিনয়নী! সেই চোখ দে যে-চোখ তোরে দেখতে পায়।
সে নয়ন-তারায় কাজ কি তারা যে-তারা লুকায় মা তারায়॥
আমি চাইনে সে-চোখ যে-চোখ দেখে মায়া
অনিত্য এই সংসারেরই ছায়া,
যে-দৃষ্টি দেখে নিত্য তোরে সেই দৃষ্টি দে আমায়॥
ও মা নিবিয়ে দে এই নয়ন-প্রদীপ দেখায় যাহা দুঃখ শোক,
এই আলেয়া পথ ভুলিয়ে যায় মা নিয়ে নরক-লোক।
তোর সৃষ্টি চির-আনন্দময় নাকি
দেখব সে-লোক, দে মোরে সেই আঁখি,
দেখে না রোগ-মৃত্যু-জ্বরা তোর সন্তান সেই দৃষ্টি চায়॥
- ভাবসন্ধান: ভক্ত মাতৃরূপিণী ত্রিনয়নীকে (কালী) স্বাভাবিক দুই নয়নে দেখতে পান না। তাই তাঁকে দেখার জন্য অন্তরদৃষ্টি তথা তৃতীয় চোখের অভাব অনুভব করেছেন। এই চোখের অধিকারিণী স্বয়ং কালী. তাই তিনি ত্রিনয়না। কবি দেবীকে দেখা এবং উপলব্ধির জন্য সেই তৃতীয় নয়নের প্রার্থনা করেছেন এই গানে।
কবি এই গানে তারা শব্দটি নিয়ে শব্দ-মোহ তৈরি করেছেন। যে স্বাভাবিক নয়ন-তারা দিয়ে দেখা দেবীকে দেখা যায় না, যে তারা (নয়নতারা) মাতৃরূপিণী তারাকে লুকিয়ে রাখে বা দেখতে দেয় না, সে নয়ন-তারা থেকে কি লাভ- ভক্ত এ প্রশ্ন রেখেছেন তারার (কালীর) কাছে। যে চোখে দেখা যায় শুধু মায়ার ভুবন। ভক্ত এমন চোখের প্রত্যাশী নন। কারণ এই চোখে ধরা পড়ে শুধু অনিত্য (ক্ষণস্থায়ী) জগত-সংসারের ছায়া। ভক্ত দেবীর কাছে সেই চোখ চান, যে চোখের দৃষ্টিতে দেবীকে তিনি প্রতিদিন দেখতে পাবেন।
যে নয়ন দুঃখ শোক দেখায়, আলেয়ার মতো পথ ভুলিয়ে নিয়ে যায় নরক-লোকে, সে চোখে ভক্ত কিছুই দেখতে চান না। তিনি দেখতে চান- তাঁর সৃষ্ট চির-আনন্দময় জগৎ। যে জগতে হবে রোগ-মৃত্যু-জ্বরাহীন। তিনি চেয়েছেন মোহময় ও আনন্দ প্রদায়িনী জগতকে তিনি দেবীর কাছে চেয়েছেন- মায়ের কাছে সন্তানের আব্দারের অভিব্যক্তিতে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় নি। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪৫) মাসে, টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ২ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, [নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৩০৬ গান।
- রেকর্ড: টুইন। আগষ্ট ১৯৩৮ (১৬ শ্রাবণ-১৪ ভাদ্র ১৩৪৫)।এফটি ১২৪৮৮। শিল্পী: নারায়ণ দাস বসু
- সুরকার: নজরুল ইসলাম
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- সেলিনা হোসেন। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, একান্নতম খণ্ড, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, আষাঢ় ১৪২৭। জুন ২০২১। রেকর্ডে নারায়ণ দাস বসু'র গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। গান সংখ্যা ৮। পৃষ্ঠা: ৪২-৪৪। [নমুনা]
- সেলিনা হোসেন। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, একান্নতম খণ্ড, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, আষাঢ় ১৪২৭। জুন ২০২১। রেকর্ডে নারায়ণ দাস বসু'র গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। গান সংখ্যা ৮। পৃষ্ঠা: ৪২-৪৪। [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। কালী। দর্শন-প্রার্থনা
- সুরাঙ্গ: রাগাশ্রয়ী
- রাগ: দরবারি-কানাড়া
- তাল: তালছাড়া
- গ্রহাস্বর: স