আমার বিদায়-রথের চাকার ধ্বনি ঐ গো এবার কানে আসে (amar biday rother chakar dhoni oi go ebar kane ashe)
আমার বিদায়-রথের চাকার ধ্বনি ঐ গো এবার কানে আসে।
পুবের হাওয়া তাই কাঁদে যায় ঝাউ-এর বনে দীঘল শ্বাসে॥
ব্যথায়-বিবশ গুলঞ্চ ফুল
মালঞ্চে আজ তাই শোকাকুল,
মাটির মায়ের কোলের মায়া ওগো আমার প্রাণ উদাসে॥
অঙ্গ আসে অলস হ’য়ে নেতিয়ে-পড়া অলস ঘুমে,
স্বপন-পারের বিদেশিনীর হিম-ছোঁওয়া যায় নয়ন চুমে।
হাতছানি দেয় অনাগতা
আকাশ ডোবা বিদায়-ব্যথা,
লুটায় আমার ভুবন ভরি’ বাঁধন-ছেঁড়ার কাঁদন-ত্রাসে॥
মোর বেদনার কর্পূর-বাস ভরপুর আজ দিগ্বলয়ে,
বনের আঁধার লুটিয়ে কাঁদে হরিণটি তার হারার ভয়ে।
হারিয়ে-যাওয়া মানসী হায়
নয়ন-জলে শয়ন তিতায়,
ওগো, এ কোন্ যাদুর মায়ায় দু’চোখ আমার জলে ভাসে॥
আজ আকাশ-সীমায় শব্দ শুনি অচিন পায়ের আসা-যাওয়ার,
তাই মনে হয় এই যেন শেষ আমার অনেক দাবিদাওয়ার।
আজ কেহ নাই পথের সাথি
সামনে শুধু নিবিড় রাতি,
আমায় দূরের বাঁশি ডাক দিয়েছে, রাখ্বে কে আর বাঁধন-পাশে॥
- রচনাকাল: ছায়ানট কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত এই গানের সাথে গানটি রচনা ও স্থানের নাম উল্লেখ আছে- 'কলিকাতা, শ্রাবণ ১৩২৮'। উল্লেখ্য, এই সময় তিনি এবং তাঁর বন্ধু মুজফ্ফর আহমদ, কলকাতার এঁরা ৩/৪ সি তালতলা লেনের বাড়িতে থাকতেন। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২২ বৎসর ২ মাস।
- গ্রন্থ:
- ছায়ানট [প্রথম সংস্করণ ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২৫, ৬ আশ্বিন ১৩৩২। শিরোনাম: শেষের গান]
- পুবের হাওয়া প্রথম সংস্করণ আশ্বিন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (অক্টোবর ১৯২৫)। শিরোনাম: শেষের গান]
- পত্রিকা: সহচর। শ্রাবণ ১৩২৯ (জুন-জুলাই ১৯২২)। শিরোনাম: শেষের গান। উপরে 'গান' উল্লেখ ছিল।