ও মা বক্ষে ধরেন শিব যে চরণ শরণ নিলাম সেই চরণে (o maa bokkhe dhoren shib je choron shoron nilam sei chorone)
ও মা বক্ষে ধরেন শিব যে চরণ শরণ নিলাম সেই চরণে
জীবন আমার ধন্য হলো ভয় নাই মা আর মরণে॥
যা ছিল মা মোর ত্রিলোকে
তোকে দিলাম, দিলাম তোকে
আমার ব’লে রইল শুধু তোর চরণের ধ্যান, এ মনে॥
তোর কেশ নাকি মা মুক্ত হলো ছুঁয়ে তোর ওই রাঙা চরণ
মুক্তকেশী, মুক্ত হবো ওই চরণে নিয়ে শরণ।
তোর চরণ-চিহ্ন বক্ষে এঁকে
বিশ্বজনে বলবো ডেকে ─ মা
‘দেখে যা কোন্ রত্ন রাজে আমার হৃদয়-সংহাসনে’॥
- ভাবসন্ধান: পৌরাণিক কাহিনিতে দুর্গা রক্তবীজ নামক অসুর বধ করার সময়- ভয়ঙ্কর কালী রূপে আবির্ভূতা হন। রক্তবীজকে বধ করার পরও কালী উন্মত্ত হয়ে সবকিছু ধ্বংস করতে থাকেন। সৃষ্টির ধ্বংস রোধ করার জন্য তাঁর স্বামী শিব দেবীর সামনে শুয়ে পড়েন। দেবী উন্মত্ত অবস্থায় নিজের অজান্তেই শিবের বুকে পা দেন। কবি এই গানে সেই অসুরবিনাশিনী দেবীর শিববক্ষে রাখা পায়ের মহিমাকে অভয় চরণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। মাতৃরূপিণী সেই অভয়-চরণের শরণাগত হয়ে- কবি নিজেকে মৃত্যভয়হীন সন্তান ভেবে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন।
ত্রিলোকের কবির কাছে যা ছিল, দেবীর চরণে তার সবকিছু অর্ঘ হিসেবে দিতে চান। শুধু তিনি নিজের জন্য রাখতে চান মাতৃরূপিণী কালী তথা দুর্গার চরণের ধ্যান। কবির ভাবনা, ওই রাঙা চরণ স্পর্শ করে দেবী হয়েছিলেন মুক্তকেশী। তাই তাঁর চরণের শরাণাগত হয়ে, তিনি হতে চান পাপমুক্ত। তাঁর বক্ষের ওই মায়ের চরণ চিহ্ন নিয়ে- তিনি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে সগৌরবে প্রচার করতে চান- তাঁর হৃদয়-সিংহাসনে কোন রত্নটি বিরাজ করছে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৪) মাসে টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ৬ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৯৬২।
- রেকর্ড:
- টুইন [নভেম্বর ১৯৩৭ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৪)।] এফটি ১২১৪৯। শিল্পী: অমরেন্দ্রনাথ ঘোষ। সুরকার: কে মল্লিক
- এইচএমভি। [(সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৫৩)] এন ২৭৬৩৩। শিল্পী: মৃণালকান্তি ঘোষ। সুর চিত্ত রায় [শ্রবন নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- আহসান মুর্শেদ [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, তেত্রিশতম খণ্ড, (নজরুল ইন্সটিটিউট, আষাঢ় ১৪১৭। জুন ২০১০)। ১২ সংখ্যক গান। রেকর্ডে অমরেন্দ্রনাথ ঘোষ -এর গাওয়া সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে] [নমুনা]
- ইদ্রিস আলী। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চাশতমখণ্ড, (কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, কার্তিক ১৪২৬/নভেম্বর ২০১৯)। ৫০ সংখ্যাক গান সংখ্যা। রেকর্ডে অমরেন্দ্রনাথ ঘোষ -এর গাওয়া সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। [নমুনা] ]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। কালী। চরণবন্দনা
- সুরাঙ্গ: রাগাশ্রয়ী
- রাগ: বেহাগ-খাম্বাজ
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: সা