ওমা যা কিছু তুই দিয়েছিলি ফিরিয়ে দিলাম তোকে (o maa ja kichhu tui diyechhili)
ওমা যা কিছু তুই দিয়েছিলি ফিরিয়ে দিলাম তোকে।
তুই ছাড়া আর বলতে আপন (কেউ) রইল না ত্রিলোকে॥
তুই কোলে নেবার দায় এড়িয়ে
রেখেছিলি মন ভুলিয়ে খেলনা দিয়ে,
তুই পালিয়েছিলি ঘুম পাড়িয়ে (মায়ার) কাজল দিয়ে চোখে॥
কোটি জনম কাট্ল কেঁদে মাগো তোকে ভুলে,
(মা) তোরে মনে পড়েছে আজ, (এবার) নে মা কোলে তু'লে।
এই পুত্র জায়া মায়ার ছবি
তুই ছাড়া মা মিথ্যা সবই,
ভুলব না আর এবার আমি জড়াব না দুঃখ-শোকে॥
- ভাবসন্ধান: মাতৃরূপিণী দেবী তাঁর মায়া-লীলা অনেক কিছু দিয়ে শিশুর মন ভুলিয়ে রাখেন। এই মায়ারূপী খেলনা নিয়ে খেলতে খেলতে মানুষ একসময় সব ভুলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে মহাকালের বুকে। এই অবসরে দেবী অন্তর্হিতা হন।
এই গানে তারই আভাস পাওয়া যায়। মাতৃরূপিণী দেবী কবিকে যা দিয়েছিলেন, তার সবই ছিল তাঁকে ভুলিয়ে রাখার খেলনা। কবি মাতৃরূপিণী দেবীর কাছে অভিমানে বলছেন- কোলে নেওয়ার দায় এড়িয়ে যেন দেবী সংসারের মায়াকাজল চোখে পড়িয়ে সংসারের এই খেলাঘরে ঘুম পাড়িয়ে অন্তর্হিত হয়েছিলেন। তাই সংসার নামক খেলা ঘরের খেলনা দেবীর কাছে ফিরিয়ে দিয়ে কবি দায়মুক্ত হয়ে দেবীর কাছে নিজেকে সমর্পণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
তারপর কোটি জন্মান্তরে কেঁদে কেঁদে কাটানোর পর অবশেষে তিনি দেবীর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ মিলেছে। তাই তাঁর আবদার, দেবী যেন এই সর্বহারা ভক্তকে কোলে তুলে নেন। কবির কাছে সংসারে জায়া-পুত্র-পরিবারের যেন মায়মায়া। একমাত্র দেবীই সত্য। তাই সংসারের মোহমায়ায় দুঃখ-শোকে জড়াবেন না কবি। তিনি শুধুই দেবীর কোলেই আশ্রয় নিতে চেয়েছেন চিরতরে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৩১১।
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। প্রার্থনা