ওরে কে বলে আরবে নদী নাই (ore ke bole arobe nodi nai)

            ওরে    কে বলে আরবে নদী নাই
             যথা     রহ্‌মতের ঢল বহে অবিরল  
             দেখি    প্রেম-দরিয়ার পানি, যেদিকে চাই॥
             যাঁর     ক্বাবা ঘরের পাশে আব্‌-এ-জম্‌জম্‌
             যথা     আল্লা-নামের বাদল ঝরে হরদম,
                                          যথা ঝরে হরদম ─
             যার     জোয়ার এসে দুনিয়ার দেশে দেশে
            (ওরে)   পুণ্যের গুলিস্তান রচিল দেখিতে পাই॥
             যার     ফোরাতের পানি আজো ধরার 'পরে
                             নিখিল  নর-নারীর চোখে ঝরে
            (ওরে)   শুকায় না যে নদী দুনিয়ায়,
             যার     শক্তির বন্যার তরঙ্গ-বেগে
             যত     বিষণ্ন-প্রাণ ওরে আনন্দে উঠল জেগে
             যাঁর     প্রেম-নদীতে, যাঁর পুণ্য-তরীতে
                                               মোরা ত'রে যাই॥

  • ভাবসন্ধান: এই গানে ইসলাম ধর্মের মহিমাকে উপস্থাপন করা হয়েছে নানা রূপকতার মধ্য দিয়ে। নদনদী বিহীন আরব মূলত রুক্ষ মরু অঞ্চল। ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের পূর্বে সে দেশের মানুষের মনও ছিল রুক্ষ, করুণাবিহীন। সেই দেশে ইসলাম ধর্মের কল্যাণে অবিরল করুণার ঢল প্রবাহিত করেছিল ইসলাম ধর্ম। তাই কবি রূপকতার আশ্রয়ে কৈফিয়তের সুরে বলেছেন- 'কে বলে আরবে নদী নাই '। কারণ তিনি ইসলাম ধর্মের করুণায় প্রেম-দরিয়ায় রহমতের পানি চারদিকে দেখতে পেয়েছিলেন।

    আরবের ক্বাবার পাশে রয়েছে আব্‌-এ-জম্‌জম্‌ নামক কূপ। সেই কূপের পানির মতই আল্লাহর প্রেমের বাদল ঝরে সর্বক্ষণ। এই বাদলের ঝর্না ছড়িয়ে পড়েছে দেশে দেশে। ইসলামের আদর্শে সে সকল দেশে রচিত হয়েছে প্রেমময় পুণ্যের গোলাপ-বাগান।

    যেন কারবালার বেদনা বুকে নিয়ে বিশ্বের নরনারীর অশ্রুবর্ষণ করে। সে অশ্রুধারায় আরবের ফোরাত নদীর জলধারা হয়ে প্রবাহিত হয়। তাই দুনিয়ার এই নদীর মতো ইসলাম ধর্মের করুণার জলধারা কখনো শুকায় না। বরং প্রবল শক্তিতে ব্ন্যার তরঙ্গ-বেগে ধেয়ে চলে। কবি শোকাহত বিষণ্ণ দশা থেকে আনন্দে জেগে ওঠার আহ্বান করেছেন সবাইকে। তাঁর প্রেমনদীর পুণ্য-তরীতে যেন সবাই সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে যেতে পারেন- এমনটা কবির মনোবাসনা।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে (চৈত্র ১৩৪৪- বৈশাখ ১৩৪৫) টুইন রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ১০ মাস।
     
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, ৬৭৮ সংখ্যক গান (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৭। ফেব্রুয়ারি ২০১১)। গান ৫৬।
     
  • রেকর্ড: টুইন। এপ্রিল ১৯৩৮ (চৈত্র ১৩৪৪- বৈশাখ ১৩৪৫) এফটি ১২৩৫৫। শিল্পী: আব্বাস উদ্দীন। সুর: গিরীন চক্রবর্তী।[শ্রবণ নমুনা]
     
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশনজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি তৃতীয় খণ্ড (নজরুল ইন্সটিটিউট)। পৃষ্ঠা ৪৫-৪৮] [নমুনা]
  • সুরকার: গিরীন চক্রবর্তী
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলামী গান। ধর্মমহিমা
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
    • তাল: দ্রুত দাদরা
    • গ্রহস্বর: গা।

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।