ওরে তরু তমাল শাখা (ore toru tomal shakha)
ওরে তরু তমাল শাখা।
আছে পল্লবে তোর মোর বল্লভ কৃষ্ণ কান্তি মাখা।
আমি তাইতো তমাল কুঞ্জে আসি
তাইতো তমাল ভালোবাসি,
তোর পথ-ছায়ায় আছে যে তার (কৃষ্ণ) চরণ-চিহ্ন আঁকা॥
তোর চূড়ায় ময়ূর নাচে,
যেন কৃষ্ণ-ময়ূর পাখা তাই দেখে পরান বাঁচে ─
কৃষ্ণহারা পরান আমার বাঁচে।
তোর শাখাতে স্বর্ণ-লতা দোলে
আমি ভাবি শ্যামের পীত বসন বলে,
মোর অঙ্গ যেন থাকে রে তোর কালো ছায়ায় ঢাকা
তোর ছায়া নয় রে শ্যামের ছোঁওয়া, যেন শ্যামের শীতল ছোঁওয়া॥
- ভাবসন্ধান: তমাল গাছের অবলম্বনে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রগাঢ় প্রেম-ভক্তির উচ্ছ্বাস উপস্থাপিত হয়েছে এই গানে। কৃষ্ণবিহীন বিরহদগ্ধ কৃষ্ণ-অনরাগিণীর কাছে তমাল তরু হয়ে উঠেছে কৃষ্ণ-প্রেমের আধার। কৃষ্ণ-অনুরাগিণীর কাছে তমালের সৌন্দর্য-ছায়ায় মিশে আছে কৃষ্ণের স্মৃতিকাতর অনুভব। কৃষ্ণবিহীন তমালবনে তিনি আসেন স্মৃতি-সৌরভ ঘিরে থাকা মোহময় কৃষ্ণ-অভিসারে।
কৃষ্ণ-অনুরাগিণী তমালকে ভালেবেসে তমালকুঞ্জে আসেন। কারণ, তার পল্লব-শাখায় তিনি খুঁজে পান প্রিয়তম কৃষ্ণের দেহ-সৌন্দর্য, তার পথছায়ায় খুঁজে পান কৃষ্ণের চরণ-চিহ্ন। তিনি কৃষ্ণের মুকুটের চূড়ায় বাঁধা ময়ূর -পেখমের আন্দোলনে দেখে, তমাল বনের ময়ূরকেই কৃষ্ণের স্থান দেন। তিনি কৃষ্ণ-ময়ূর (কৃষ্ণরূপী ময়ূর) দেখে তাঁর কৃষ্ণহারা বিরহবিধুর মনে বেঁচে থাকার স্বস্তি খুঁজে পান। তমালের শাখায় স্বরণলতা দোলে, তা দেখে তাঁর মনে হয় যেন শ্যামের পীত বসনের দোলা। কৃষ্ণ-অনুরাগিণীর অঙ্গ ঘিরে থাকে তমালের কালো ছায়া। তাঁর কাছে এই ছায়া মনে হয় বিরহদ্গ্ধ প্রাণে শ্যামের শীতল ছোঁওয়া।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৩১৬। পৃষ্ঠা: ৩৯৮]
- পর্যায়
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব। কৃষ্ণ। অন্বেষণ