ওরে বনের ময়ূর কোথায় পেলি এমন চিত্রপাখা (ore boner moyur kothay peli emon chitropakha)
ওরে বনের ময়ূর কোথায় পেলি এমন চিত্রপাখা
তোর পাখাতে হরির স্মৃতি পাখার শ্রী কি আঁকা॥
তারই মতন হেলে দুলে
নাচিস্ রে তুই পেখম খুলে
তনুতে তোর ওরে শ্যামের আঁখির নীলাঞ্জন মাখা॥
হারিয়ে নব কিশোরে, দিবা-নিশি ঘুরি
তাই কি শ্যামের বিভূতি তুই আনলি ক'রে চুরি।
সান্ত্বনা কি দিতে মোরে
শ্যামল রেখে গেছে তোরে
তাইতো তোরে হেরি ওরে যায় না কাঁদন্ রাখা॥
- ভাবসন্ধান: এই গানে ময়ূরকে অবলম্বন করে কৃষ্ণের সৌন্দর্য মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। কৃষ্ণের সৌন্দর্যের উপমায় কবি ময়ূরের সৌন্দর্যকে উপস্থাপন করেছেন বিমুগ্ধ বিস্ময়ে। কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে আছে কৃষ্ণ-বিরহের বিরহ বেদনা। সে বিরহের জ্বালা প্রশমনে কবি ময়ূরের সৌন্দর্যের মাঝে কৃষ্ণের সৌন্দর্যকে অনুভব করে তৃপ্ত হতে চেয়েছেন।
কবি ময়ুরে চিত্রিত পেখমের রহস্যের ভিতরে খুঁজে পেতে চেয়েছেন হরির (কৃষ্ণ) সৌন্দর্য। কৃষ্ণের মতই হেলে দুলে চলে যেন বনের ময়ূর। যেন কৃষ্ণকে অনুকরণ করেই ময়ূর নাচে পেখম মেলে। তাঁর আঁখির নীলাঞ্জনের বর্ণই যেন হয়ে গেছে ময়ুরের গায়ের নীল রঙ।
নব-কিশোর কৃষ্ণকে হারিয়ে যেন দিবা নিশি পরিভ্রমণ করেন কবি। এই কারণে ময়ূর যেন শ্যামের বিভূতি চুরি করে তার দেহ সৌন্দর্যে ধারণ করেছে। যেন সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য শ্যাম তাঁর শ্যামল বর্ণটূকু ময়ূরে পেখমে রেখে গেছেন। ময়ূরে বর্ণাঢ্য রূপের মাঝে কবি অনুভব করেছেন শ্যামের রূপ। সে অনুভবে শ্যাম-বিরহ আরো তীব্রতর হয়ে ওঠেছে। ময়ূর-দর্শনের ভিতরে কৃষ্ণের অনুভব তীব্রতর হয়ে বিরহ-ব্যথায় ক্রন্দসী হয়ে ওঠেছে কবির মন।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৪৩) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি গানটির রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ৫ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৯৮১। পৃষ্ঠা: ৩০১
- রেকর্ড: এইচএমভি [নভেম্বর ১৯৩৬ (কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৪৩)]। এন ৯৮০০। শিল্পী: মিস্ প্রমোদা
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সেলিনা হোসেন [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, তেতাল্লিশতম খণ্ড, আষাঢ় ১৪২৫] গান সংখ্যা ৩। পৃষ্ঠা: ২৭-২৯ [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম, বৈষ্ণব। কৃষ্ণ। বিরহ
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গান
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: প