ওরে সর্বনাশী! মেখে এলি (ore sorbonashi! mekhe eli )

 ওরে   সর্বনাশী! মেখে এলি এ কোন চুলোর ছাই!
         শ্মশান ছাড়া খেলার তোর জায়গা কি আর নাই॥
         মুক্তকেশী, কেশ এলিয়ে
 ওমা   বেড়াস কখন কোথায় গিয়ে
আমি   এক নিমেষ তোকে নিয়ে (আমি) শান্তি নাহি পাই॥
 ওরে   হাড়-জ্বালানী মেয়ে, হাড়ের মালা কোথায় পেলি,
         ভুবন-মোহন গৌরী রূপে কালি মেখে এলি!
 তোর  গায়ের কালি চোখের জলে
 আমি  ধুইয়ে দেব আয় মা কোলে;
তোরে  বুকে ধরেও মরি জ্ব'লে, আমি দিই মা গালি তাই॥

  • ভাবসন্ধান: এই গানে দেবী কালীকে উপস্থাপন করা হয়েছে মাতা-কন্যার দ্বৈত সত্তার বিচারে। গানটির শুরুতে কবি ভর্ৎসনার সুরে মাতা-কন্যারূপিণী কালীকে উপস্থাপন করা হয়েছে, 'ওমা' সম্বোধনে। এই মা হতে পারেন জননী, হতে পারে মাতৃতূল্যা কন্যা। এই কন্যা সর্বনাশী। আক্ষরিক অর্থে সর্ব বিনাশকারী নয়। নিতান্তুই অপত্য স্নেহাশ্রিত ক্রোধান্বিত সম্বোধন। এই কন্যা শ্মশানের চিতার ছাই মেখে ঘুরে বড়ান খেলাচ্ছলে। সেখানেই কবি দুরন্ত কন্যাকে ভর্ৎসনা ও শাসনের সুরে তীব্তর আক্ষেপে বলেন- 'শ্মশান ছাড়া খেলার তোর জায়গা কি আর নাই'। কন্যাকে একমূহুর্তে জন্য কাছে পান না কবি, তাই তাঁর এই ক্রোধ ও আক্ষেপ। গৃহী পিতামাতার মতই কবি এই  অশান্ত দুরন্ত কন্যাকে বলেন- 'তোকে নিয়ে (আমি) শান্তি নাহি পাই'।

    ভুবন-মোহিনী গৌরী (দুর্গা) রূপ ত্যাগ করে- গায়ে কলি মেখে কালী হয়ে আসেন কবির মানসকন্যা রূপে। তাঁর গলায় থাকে শ্মশানের হড়ের মালা। কন্যার দুরন্তপনায় অতিষ্ট কবি তাঁকে 'হাড়-জ্বালানী মেয়ে' (চরম অশান্তি সৃষ্টিকারণী) নামে অভিহিতা করেন- বিরাগ ও স্নেহানুরাগের দ্বৈত অনুভবে।

    এই কন্যা যতই 'হাড়-জ্বালানী মেয়ে' হোক, অপত্যস্নেহে তিনি কাছে টেনে নিতে চান। তাঁর গায়ের কালি তিনি মুছে দিতে চান অপত্য-স্নেহাশ্রুতে। কবি পরমাদরে এই মাতৃরূ[পিণী কন্যাকে বুকে ধরে রেখেই তাঁর স্নেহতৃষ্ণার্তের জ্বালা মেটাতে চান। এই জ্বালা আছে বলে, তিনি দেবীকে ভর্ৎসনা করেন তীব্র অপত্যস্নেহ। এর গভীরে লুকিয়ে থাকে মাতৃরূপিণী দেবীর প্রতি তাঁর অপার মাতৃভক্তি

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন-১৩৪৫) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি এই গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ৩ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, ৬৭৮ সংখ্যক গান (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৭। ফেব্রুয়ারি ২০১১)। গান- ৬৭৬। পৃষ্ঠা: ২০৬।
  • রেকর্ড: এইচএমভি [সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ (ভাদ্র-আশ্বিন-১৩৪৫)। এন ১৭১৮৩। শিল্পী: মৃণালকান্তি ঘোষ। সুর: কমল দাশগুপ্ত]
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত।সনাতন হিন্দুধর্ম, শাক্ত। কালী
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গান
    • তাল: দাদরা
    • গ্রহস্বর:

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।