(ওরে) হতভাগী রক্ত-খাগী, কোথায় ছিলি বল্ (ore hotobhagi rokto-khagi)

(ওরে)    হতভাগী রক্ত-খাগী, কোথায় ছিলি বল্!
(তোর)   দেখে ছিরি ভয়ে মরি চোখে আসে জল॥
                 বেণী খুলে এলোকেশে
                 বেড়াস এ কোন্‌ পাগল-বেশে,
            চাঁদকে ফেলে নীল আকাশে আন্‌লি কোন্‌ অনল॥
            (কপালে জ্বাললি কোন্‌ অনল)
(ঐ)       সদ্য ফোঁটা পদ্মফুলে কে মাখাল কালি?
            মা আমারি কপাল মন্দ কারে দিব গালি।
                  রাজ-দুলালি আদর পেয়ে
                  সাজ্‌লি ছি ছি নাগর মেয়ে,
(তোর)    চিন্‌তে পারি, গৌরী দেখে রাঙা পদতল॥

  • ভাবসন্ধান: এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে, কবির মনে উদ্ভূত দুর্গা ও কালীর রূপ-বৈপরিত্যের দ্বন্দ্ব। তাঁর কাছে দুর্গা মাতৃরূপিণী শ্রীময়ী মমতাময়ী, সর্বাঙ্গসুন্দর। কালীরূপিণী দুর্গার ভয়ঙ্করা রূপকে তিনি হৃষ্ট মনে গ্রহণ করতে পারেন নি। যে ভয়ঙ্করা কালী রক্তবীজ নামক অসুর বধের সময় রক্তপান করেছেন অট্টাহাস্যে, কবি দুর্গার সে রূপকে হৃদয়ে তিনি স্থান দিতে পারেন না। এ রূপের প্রসঙ্গ তুলে তিনি কালীকে সম্বোধন করেছেন রক্তখাগী নামে। মাতৃরূপিণী কালীর দুর্গার স্নিগ্ধ রূপের পরিবর্তে এই ভয়ঙ্করী রূপ দেখে কবি ভীত-সন্ত্রস্ত, একই সাথে বিকৃত মাতৃরূপ দেখে তাঁর হৃদয় বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়েছে। এই গানে দেবীর প্রতি তাঁর এই অনুযোগ উত্থাপিত হয়েছে ।

    তাঁর এলোকেশী পাগলিনীর বেশ দেখে তিনি আশাহত। আকাশের স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নার মতো রূপ পরিহার করে কপালের তৃতীয় নয়নের আগুনে জ্বালাময়ী হয়ে উঠেন, তখন  সে রূপের কবি মাতৃরূপিণী দুর্গাকে দেখতে পান না বলেই তাঁর এই হতাশা, এই মনোবেদনা। কবির এই ভাবনা  উঠে এসেছে সন্তানের চোখে মায়ের তুলনামূলক বিবেচনায়। কবি মাকে দেখতে চেয়েছেন- বঙ্গজনপদের বঙ্গজননীর আদর্শিক রূপে। তিনি ব্যথিত হয়েছেন- সদ্য ফোঁটা পদ্মফুলের মতো দুর্গার রূপের পরিবর্তে কালো এবং ভয়ঙ্করা কালীর রূপ দর্শনে। তাই কবি তাঁর সৌভাগ্যকে মন্দভাগ্য ভেবে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছেন। রাজ-দুলালি (দুর্গা) আদর পেয়ে কালী যেন নিজেকে সাজিয়েছেন যেন নাগরিকার মতো করে। মাতৃরূপিণী দুর্গার এই রূপকে তিনি ধিক্কার  জানিয়েছেন। এ রূপে কবি তাঁর মাতৃরূপিণী দেবীকে দেখে চিনতে পারেন না বলেই তিনি বিভ্রান্ত। কারণ তিনি দেবীকে চিনতে পারেন শুধুই তাঁর গৌরী রাঙা পদতল দেখে। এই তাঁর একমাত্র ভরসা।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৩২০। পৃষ্ঠা: ৪০০]
  • সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাবলি:
    • পর্যায়:
      • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। দুর্গা। অনুযোগ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।