কও কথা কও কথা, কথা কও হে দেবতা (kow kotha kow kotha, kotha kow)
কও কথা কও কথা, কথা কও হে দেবতা।
তুমি তো জানো স্বামী আমার প্রাণে কত ব্যথা॥
মোর তরে আজি সকল দুয়ার
হইল বন্ধ হে প্রভু আমার
তুমি খোলো দ্বার! সহে না যে আর সহে না এ নীরবতা॥
শুনি অসহায় মোর ক্রন্দন
গলিবে না পাষাণের নারায়ণ
ভোলো অভিমান চরণে লুটায় পূজারিণী আশাহতা॥
- ভাবসন্ধান: পরম কৃষ্ণভক্ত মীরার আকুল আবেদন তিনি বাঙময় হয়ে তাঁর সাধনাকে সার্থক করে তোলেন। মীরা জানেন, তাঁর অন্তরের কথা তাঁর আরাধ্য দেবতা কৃষ্ণ জানেন। সব কিছু বিসর্জন দিয়ে তিনি তাঁর আরাধনাকে একমাত্র অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাই তাঁর কাছে কৃষ্ণারধনা ছাড়া আর কিছুই নই। ভক্তি-প্রেম-কর্মের সকল ক্ষেত্রের সকল দ্বার বন্ধ হয়ে গেছে। এখন একমাত্র কৃষ্ণই আশ্রয়-গৃহ। বাণীহীন পাষাণ দেবতা নির্বাক। তাঁর এই নীরবতায় মীরার কাছে অসহনীয় যাতনা। তাই তাঁর এই অন্তরদেবতা দেবতার কাছে একান্ত নিবেদন. যেন তিনি তাঁর অবরুদ্ধ দুয়ার খুলে তাঁর বাণীময় রূপের সন্ধান পান। বাণীর আশ্রয়ে তাঁকে আশ্রয় দেন তাঁর গৃহে।
তাঁর এই অসহায় ক্রন্দন শুনেও কি পাষাণের নারায়ণের পাষাণ মন দ্রবীভূত হবে না। এই আক্ষেপ তাঁর বহু দিনের। তিনি মনে করেন- কোনো এক অজানিত অভিমানে কৃষ্ণ নির্বাক। তাই তাঁর কাছে মীরার অনুরোধ, যেন তিনি সকল অভিমান ভুলে, এই চরণে বিলুণ্ঠিতা পূজারিণীকে আশাহতা না রেখে, বাঙময় হয়ে তাঁর সাধনাকে সার্থক করে তোলেন।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪০) এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি যোগেশ চৌধুরী 'মীরাবাঈ' নাটক প্রকাশ করে। এই নাটকে গানটি এই নাটকের মীরা চরিত্রের গান হিসেবে প্রথম প্রচারিত হয়। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ৩ মাস।
- রেকর্ড: এইচএমভি [সেপ্টেম্বর ১৯৩৩ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪০)। এন ৭১৪৫। নাটক মীরাবাঈ নাট্যকার: যোগেশ চৌধুরী। চরিত্র: মীরাবাঈ। শিল্পী: মিস প্রভা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, আটাশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা।[নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব সঙ্গীত। কৃষ্ণ। আত্ম-নিবেদন।
- সুরাঙ্গ: রাগাশ্রয়ী
- রাগ: কানাড়া মিশ্র।
- তাল: যৎ।