কানন গিরি সিন্ধু-পার ফির্নু পথিক দেশ-বিদেশ।
কানন গিরি সিন্ধু-পার ফির্নু পথিক দেশ-বিদেশ।
ভ্রমিনু কতই রূপে এই সৃজন ভুবন অশেষ॥
তীর্থ-পথিক এই পথের ফিরিয়া এল না কেউ,
আজ এ পথে যাত্রা যার, কা'ল নাহি তার চিহ্ন লেশ॥
রাত্রি দিবার রঙমহল চিত্রিত চন্দ্রাতপ
দু’দিনের এ পান্থবাস এই ভুবন − এ সুখ-আবেশ॥
ভোগ-বিলাসী "জমশেদের" জল্সা ছিল এই সে দেশ,
আজ শ্মশান, ছিল যথায় "বহ্রামের" আরাম আয়েশ॥
- ভাবসন্ধান: মহাপরিব্রাজক কবি বিশ্ব পরিভ্রমণ করেছেন, দেখেছেন জগতসংসারের অশেষ সৃষ্টির অশেষ রূপ। কবির এই ভ্রমণ স্থানের বিচারে যেমন বাঁধা নয়, তেমনি সময়ের বিচারেও নয়। প্রপঞ্চময় এ জগতের লীলা কবি অনুভব করেছেন সুদূর থেকে বর্তমান পর্যন্ত। মূলত প্রপঞ্চময় এই জগতের কিছু স্থায়ী নয়, কবি সেই চিরন্তন সত্যকেই উপস্থাপন করেছেন এই গানে।
তিনি দেখছেন কত তীর্থযাত্রী লক্ষ্যস্থলের দিকে এগিয়ে গেছে, তারপর আর তারা কেউ ফেরেনি। যেন এসবই মহাকালের পথে মহাপ্রয়াণ। কবি মনে করেন, জীবনটা যেন দিবারাত্রির রঙমহল। এ রঙমহলে চলে আনন্দ-বেদনার লীলা। মহাকালের পথিক তার দু'দিনের জন্য যাত্রাপথে পার্থিব জীবন কাটিয়ে যায়, পৃথিবী নামক পান্থশালায়। তারপর তার আবার নিরুদ্দেশ যাত্রা। আভোগে তিনি উপমা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন পারশ্যের ভোগী বাদশা 'জমশেদ' ও 'বহ্রাম'-কে। যে ভোগী জমশেদের জলসাঘর, একসময় উৎসবমুখর করে রেখেছিল শরাব এবং সাকী, যেখানে ছিল বহরামের বিলাসভবন, তা আজ মহাশ্মশানে পরিণত হয়েছে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসে প্রকাশিত 'নজরুল গীতিকা' গ্রন্থে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। উল্লেখ্য, একই সময়ে গানটি উত্তরা পত্রিকায় (ভাদ্র ১৩৩৭) গানটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩১ বৎসর ৩ মাস।
- গ্রন্থ
- নজরুল-গীতিকা
- প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। ওমর খৈয়াম-গীতি। ৩। ভীমপলশ্রী-দাদরা। পৃষ্ঠা ৩]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা ফাল্গুন ১৪১৩/মার্চ ২০০৭] নজরুল গীতিকা। ওমর খৈয়াম-গীতি। ৩। ভীমপলশ্রী-দাদরা পৃষ্ঠা: ১৭২]
- নজরুল-গীতিকা
- পত্রিকা:
- উত্তরা [ভাদ্র ১৩৩৭]
- রাগ: ভীম পলশ্রী
- তাল: দাদরা