কালো পাহাড় আলো করে কে ও কে কালো শশী (kalo pahar alo kore ke o shoshi)
কালো পাহাড় আলো করে কে ও কে কালো শশী,
নিতুই এসে লো বাজায় বাঁশি কদম তলায় বসি॥
সই লো মানা কর্ না ওকে,
ও চায় না যেন অমন চোখে,
ওর চাউনি দেখে অলপ বয়সে হলাম দোষী॥
গুরুজনের সে ভয় করে না,
বাঁকিয়ে ভুরু ডাকে — সে ডাকে, আমারে সে ডাকে।
রাতের বেলায় চোরের মত চাহে বেড়ার ফাঁকে।
আমি না চাহিলে নূপুর ছুঁড়ে
কলসি ভেঙে পালায় দূরে,
আমি মরেছি সই প'রে তাহার বনমালার রশি॥
- ভাবসন্ধান: কৃষ্ণ-প্রেম অস্থির রাধার প্রেমাসক্তিকে উপস্থাপন করা হয়েছে এই গানে। প্রেম-লীলায় কৃ্ষ্ণের কাছে রাধা নানাভাবে নাজেহাল হয়েও- কৃষ্ণের প্রতি তাঁর প্রেম গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়েছে। কৃষ্ণের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার অনুযোগ সখিদের কাছে রাখলেও, তিনি মূলর কৃষ্ণের প্রেমেই আত্মবিসর্জন দিয়েছেন।
এই গানে কৃষ্ণের বিশালত্বকে উপস্থাপনের জন্য 'কালো পাহাড়' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। একই সাথে কৃষ্ণকে বিভূষিত করা হয়েছে 'কালো শশী' বিশেষণে, যিনি তার কালো রূপের সৌন্দর্য ও প্রেমানুরাগে রাধার চিত্তাকাশকে আলোকিত করে রাখেন।
যিনি প্রতিদিনই রাধাকে মোহিত করার জন্য, কদম তলায় এসে বাঁশি বাজান। কৃষ্ণের চাহনিতে প্রেমাসক্তিতে রাধা মোহিত হয়েছিলেন তাঁর অল্প বয়সে। সে কারণে গুরুজনদের চোখে তিনি দোষী হয়েছিলেন। এখনও কৃষ্ণ তাঁর দিকে তেমনি চোখে তাকান। তাই তিনি তাঁর সখিদের কাছে সকাতরে অনুরোধ করছেন- যেন তিনি ওভাবে তাকিয়ে গুরুজনদের কাছে আবার দোষী না করেন। কিন্তু কৃষ্ণের গুরুজনের তিরস্কারের ভয় নেই। তিনি তাঁর বাঁকা ভুরু বাঁকিয়ে রাধাকে চোখের ইশারায় ডাকেন। রাতের বেলায় তিনি চোরের মত বেড়ার ফাঁক দিয়ে ডাকেন। তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত না করলে, তিনি নূপুর ছুঁড়ে পারেন, তাঁর জলের কলসি ভেঙে পালিয়ে যান দূরে। এত কিছুর পরেও রাধা তাঁকে ভুলতে পারেন না। তিনি কৃষ্ণের প্রেমের রশিতে মরেছেন- নিরুপায়া রাধা তাঁর সখিদের কাছে শেষ পর্যন্ত তাঁর এই প্রেমাবেগকে প্রকাশ করেছেন।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৬) এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি এই গানের একটি রেকর্ড প্রকাশ করেছিল।এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৪ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)]। ৬২৫ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ১৯০।
- রেকর্ড: এইএমভি [অক্টোবর ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৬)]। এফটি. ১৭৩৩০। শিল্পী: আঙ্গুরবালা। [শ্রবণ নমুনা]
- সুরকার: নজরুল ইসলাম
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- সুধীন দাশ [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, চৌত্রিশতম খণ্ড, (একুশে বই মেলা। ফাল্গুন ১৪১৮/ফেব্রুয়ারি ২০১২)]। ৬ষ্ঠ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ১৯-২১]। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৫১) মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশিত গানের সুরানুসারে কৃত স্বরলিপি। [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব। রাধাকৃষ্ণ লীলা
- সুরাঙ্গ: ঝুমুরাঙ্গ
- তাল: ঝুমুর
- গ্রহস্বর: মপা