আমি ভাই ক্ষ্যাপা বাউল, (ami bhai khepa baul)
আমি ভাই ক্ষ্যাপা বাউল, আমার দেউল আমারি এই আপন দেহ।
আমার এ প্রাণের ঠাকুর নহে সুদূর অন্তরে মন্দির-গেহ॥
সে থাকে সকল সুখে সকল দুখে আমার বুকে অহরহ,
কভু তায় প্রণাম করি, বক্ষে ধরি, কভু তা'রে বিলাই স্নেহ॥
ভুলায়নি আমারি কুল, ভুলেছে নিজেও সে কুল,
ভুলে বৃন্দাবন গোকুল মোর সাথে মিলন বিরহ।
সে আমার ভিক্ষা-ঝুলি কাঁধে তুলি', চলে ধুলি-মলিন পথে,
নাচে গায় আমার সাথে একতারাতে, কেউ বোঝে, বোঝে না কেহ॥
- ভাবসন্ধান: গৃহীর কাছে যা স্বাভাবিক জীবনযাপন, বাউল তাকে তুচ্ছ করে আপন খেয়ালে ঘর ছাড়েন। তাই তিনি গৃহীর কাছে খ্যাপা, ছন্নছাড়া। গৃহীরা স্রষ্টাকে খুঁজে ফেরেন কঠোর প্রার্থনায়, ঘুরে মরেন তীর্থে তীর্থে। কিন্তু বাউলের কাছে তাঁর দেহই দেবালয়। বাউল ভাবেন তাঁর মনের ঘরেই তার প্রাণের মানুষ হয়েই বিরাজ করেন পরমস্রষ্টা। তিনি কোনো অবস্থাতেই বাউলকে ত্যাগ করেন না। বাউল তাঁকে অনুভব করেন আপন ঘরের গভীর তলে। তাই বাউল তাঁকে ভক্তির অর্ঘ নিবেদন করেন, গভীর মমতায় বুকে ধারণ করেন।
বাউলের মনের মানুষ শুধু তাঁকেই সংসারে কুলমান ত্যাগী করেন নি। মনের মানুষ নিজেও তাঁর সাথে বাউলের পথে নেমেছেন। গোকুলরূপী সংসারের প্রেম-বিরহের বৃন্দাবন মায়া ত্যাগ করে, মনের মানুষ তাঁর সাথে বিরাজ করেন। বাউলের ভিক্ষার ঝুলি অবলীলায় তিনিই বহন করেন। তিনি বাউল হয়ে ধূলি-মলিন পথে পথে তাঁর সাথেই চলেন। বাউলের মনের একাতারাতে তিনিই সুর তোলেন, সে সুরের ছন্দে তিনিই নাচেন। গৃহীদের কেউ কেউ এ রহস্য বুঝতে পারেন, কারো কাছে তা অধরাই থেকে যায়। বাউলের সাথে মনের মানুষের এই নৈকট্য পরম পাওয়া। তাই তাই তিনি সগৌরবে আত্মপরিচয় দেন- 'আমি ভাই খ্যাপা বাউল'।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ) মাসে প্রকাশিত 'চন্দ্রবিন্দু' সঙ্গীত-সংকলনে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩২ বৎসর ৪ মাস।
- গ্রন্থ:
- চন্দ্রবিন্দু
- প্রথম সংস্করণ [সেপ্টেম্বর ১৯৩১, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ।]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১। চন্দ্রবিন্দু। ৪। বাউল। পৃষ্ঠা: ১৬৫]
- বনগীতি
- প্রথম সংস্করণ [১৩ অক্টোবর ১৩৩২ (রবিবার ২৭ আশ্বিন ১৩৩৯)]। বাউল-লোফা। পৃষ্ঠা: ৭৯]
- চন্দ্রবিন্দু
- বেতার: বাংলার গ্রাম (সঙ্গীতালেখ্য)। কলকাতা বেতারকেন্দ্র ক। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মে (শনিবার ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৭)সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সময় ৭.০৫-৭.৫৪ মিনিট।
সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ, ১০ম সংখ্যা। ১৬ মে ১৯৪০। পৃষ্ঠা: ৫৪৩]
- রেকর্ড:
- এইচএমভি। জানুয়ারি ১৯৩২ (পৌষ-মাঘ ১৩৩৮)। এন ৩৮৩৩। শিল্পী ধীরেন দাস
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: ইদ্রিস আলী। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি চুয়াল্লিশততম খণ্ড। স্বরলিপি নজরুল ইন্সটিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত। আষাঢ় ১৪২৪/জুন ২০১৮] পৃষ্ঠা: ৫৯-৬৪।[নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: বাউল দর্শন [দেহতত্ত্ব]
- সুরাঙ্গ: বাউল
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: সা