কি দিয়ে পূজি ভগবান (ki diye puji vogoban)
কি দিয়ে পূজি ভগবান!
আমার ব'লে কিছু নাহি হরি সকলি তোমারি যে দান॥
মন্দিরে তুমি, মূরতিতে তুমি
পূজার ফুলে তুমি, স্তব-গীতে তুমি,
ভগবান দিয়ে ভগবান পূজা করিতে ─ তুমি যদি ভাব অপমান॥
কেমন তব রূপ দেখিনি হরি
আপন মন দিয়ে তোমারে গড়ি,
কাঁদ না হাস তুমি সে-রূপ হেরি ─ বুঝিতে পারি না আমি তাই কাঁদে প্রাণ॥
কোটি রবি-শশী আরতি করে যারে,
প্রদীপ জ্বালিয়া খুঁজি আমি তারে।
বনডালা যাঁর পূজার সম্ভার, যোগী মুনি করে যুগযুগ ধ্যান।
কোথা শ্রীমুখ তব কোথা শ্রীচরণ, চন্দন দিব কোন্খান॥
- ভাবসন্ধান: আরাধ্য হরিকে (বিষ্ণু) জানার চেষ্টায় ব্যর্থতার বেদনা উপস্থাপিত হয়েছে এই গানে। হরির প্রতি ভক্তি রেখেই -তিনি তাঁর অজ্ঞেয় অরূপ রূপের সন্ধানে বিভ্রান্ত হয়েছেন। তিনি হরির সর্বব্যাপী সত্তাকে স্বীকার করেন, অথচ যথাযথ রূপে তাঁর দর্শন লাভ থেকে বঞ্চিত হন। দেখা-না দেখা হরিদর্শনের ধ্যানে বিভ্রান্ত ও ব্যর্থ কবি ব্যর্থতার সীমাহীন দুঃখ, কবি মনের গভীরে বিরামহীন বয়ে চলেছে।
কবি তাঁর পরম ভক্তিতে মনে করেন- তাঁর নিজের বলে কিছু নাই, সবই হরির দান। কবি হরিকে মন্দিরে, মূর্তিতে, পূজার ফুলে, স্তবগীত ইত্যাদিতে নানারূপে দেখতে পান সর্বত্র। তাই তিনি ভাবেন হরিকে দিয়েই হরিকে পূজা করাটা- তাঁর জন্য অপমানজনক কি না।
কবি স্বীকার করেছেন, হরির রূপ তাঁর কাছে অজ্ঞেয়। তাই কবি হরির রূপ তৈরি করেন তাঁর কল্পলোকের বিরাজমান বিমূর্ত রূপ থেকে। তাঁর মনোলোকের ভাবনায় হরিকে কখনো ক্রন্দসী কখনো সহাস্য মূর্তিতে গড়েন। হরিকে না জেনেই অবুঝের মতো তিনি এসব করেন বলেই, তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে বিলাপ করেন।
কবি মনে করেন- যে হরির কাছে আত্মনিবেদনের জন্য মহাবিশ্বের কোটি কোটি রবি-শশী তাঁর আরতি করে, যোগী-মুনি যুগে যুগে বন-ডালার পূজা-উপকরণ দিয়ে তাঁর ধ্যান করে চলেছেন, আর কবি তাঁকে প্রদীপ জ্বালিয়ে খুঁজে মরেন সর্বত্র। এতকিছুর পরেও কবি তাঁর ভক্তিমার্গে তাঁর পরম আরাধ্য পরমসত্তার শ্রীমুখী শ্রীচরণ দেখতে পান না। তাই বুঝে উঠতে পারেন না- তিনি ভক্তিরূপী চন্দন কোথায় দেবেন।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৩৯) মাসে গানটি প্রথম এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩ বৎসর ৮ মাস।]
- গ্রন্থ:
- গীতি-শতদল
- প্রথম সংস্করণ [বৈশাখ ১৩৪১। এপ্রিল ১৯৩৪। জৌনপুরী মিশ্র-আদ্ধা কাওয়ালি]।
- জরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। গীতি-শতদল। গান সংখ্যা ৬১। জৌনপুরী মিশ্র-আদ্ধা কাওয়ালি। পৃষ্ঠা ৩১৬-৩১৭]
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৩৭৭। রাগ: জৌনপুরী মিশ্র, তাল: আদ্ধা কাওয়ালি। পৃষ্ঠা: ৪১৭]
- গীতি-শতদল
- রেকর্ড: এইচএমভি [ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৩৯)। এন ৭০৭৯। শিল্পী: গোপাল সেন]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
- আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, চুয়ান্নতম খণ্ড, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, আশ্বিন ১৪২৮। সেপ্টেম্বর ২০২১] গান সংখ্যা ৫। পৃষ্ঠা: ৩০-৩৪ [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দু ধর্ম, পর্মসত্তা। সাধারণ
- সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ
- তাল: ত্রিতাল
- গ্রহস্বর: সা