কুল রাখ না-রাখ তুমি সে জান (kul rakho na-rakho tmi she jano)
কুল রাখ না-রাখ তুমি সে জান।
গোকুলে তোমার কাজ কুল ভোলানো॥
মহতের পিরিতি বালির বাঁধ সম।
কভু হাতে দাও দড়ি কভু চাঁদ আন॥
কভু তুমি রাধার, চন্দ্রাবলীর কভু
তুমি যখন যা'র তখন তা'র দিকে টান।
রাজার অপরাধের নালিশ কোথায় করি।
তুমি জান শুধু বাঁশিতে মন-ভেজানো॥
- ভাবসন্ধান: এই গানে বৃন্দাবনে কৃষ্ণের প্রেম-মহিমা উপস্থাপন করা হয়েছে নেতিবাচক অভিব্যক্তিতে। কবি মনে করেন কৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলায় তাঁর ছলনাময় প্রেমটাই যেন মুখ্য। তাই কবি কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে অভিযোগ তুলে বলেছেন- তিনি কুল-বংশ-সম্ভ্রম ভুলিয়ে দিয়ে শুধু প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। জনপদাবাসীর মান-সম্ভ্রম থাকা না থাকার তোয়াক্কা করেন না তিনি।
কবি মনে করেন- কৃষ্ণের প্রেম ক্ষণস্থায়ী বালির বাঁধের মতো। তিনি এক হাতে প্রেমাকর্ষণের দড়ি ধরিয়ে দেন, অন্য সময় অন্য হাতে তিনিই প্রেমের মোহনীয় চাঁদ এনে হাজির করেন। মূলত কৃষ্ণের চঞ্চল, অস্থির, একরোখা ভালোবাসার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে এখানে।
কৃষ্ণ প্রেমে একনিষ্ঠ নন। তাই তিনি কখনো হয়ে যান রাধার, কখনো চন্দ্রবলীর প্রেমিক। কৃষ্ণই প্রেমের রাজা। তিনিই যদি অপরাধ করেন, তাহলে নালিশ করবেন কার কাছে। কবির অভিযোগ- কৃষ্ণ শুধু বাঁশিতে মন-ভেজাতে পারেন, শাশ্বত প্রেম প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪০) মাসে মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ১ মাস।
- গ্রন্থ:
- গীতি-শতদল
- প্রথম সংস্করণ [বৈশাখ ১৩৪১। এপ্রিল ১৯৩৪। পিলু-খেমটা]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংকলন। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। গীতি-শতদল। গান সংখ্যা ৩৯। পিলু-খেমটা। পৃষ্ঠা ৩০৪-৩০৫]
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১২১৩। রাগ: পিলু, তাল: খেম্টা। পৃষ্ঠা: ৩৬৯]
- গীতি-শতদল
- রেকর্ড: মেগাফোন জুলাই ১৯৩৩ (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪০)]। জেএনজি ৬৪। শিল্পী: মিস মন্টি।
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব। কৃষ্ণপ্রেম।