কৃষ্ণজি কৃষ্ণজি কৃষ্ণজি কৃষ্ণজি (krishnoji krishnoji krishnoj ikrishnoji)
কৃষ্ণজি কৃষ্ণজি কৃষ্ণজি কৃষ্ণজি।
যে কৃষ্ণ নাম জপেন ইন্দ্র-ব্রহ্মা-মহেশ্বর
যে নাম করে ধ্যান যোগী-ঋষি-সুরাসুর-নর,
এই অসীম বিশ্ব সীমা যাঁহার পায় নাকো খুঁজি ─
আমি জীবনে মরণে যেন সেই নামই ভজি॥
যাঁর অনন্ত লীলা যাঁহার অনন্ত প্রকাশ
মধু কৈটভ মর কংসে যুগে যুগে করেন নাশ,
ন্যায় পাণ্ডবের হলেন সখা সারথি সাজি'
এই পাপ কুরুক্ষেত্রে কাঁদি তাঁহারেই খুঁজি'॥
যাঁর মুখে গীতা হাতে বাঁশি নূপুর রাঙা পায়
কভু শ্রীকৃষ্ণ গোকুলে কভু গোরা নদীয়ায়,
ফেরে প্রেম-যমুনার তীরে চির-রাধিকায় খুঁজি'
মোর মন গোপিনী উন্মাদিনী সেই নামে মজি'॥
- ভাবসন্ধান: এই গানটিতে শ্রীকৃষ্ণের নামের মহিমা উপস্থাপিত হয়েছে। সনাতন হিন্দু ধর্মের আলোকে কবি এই নাম-বন্দনার মধ্য দি্য়ে কৃষ্ণ তথা বিষ্ণুর অসীম, অনন্ত ও সর্বব্যাপী সত্তার কাছে নিজেকে সমর্পণের আকাঙক্ষা ব্যক্ত করেছেন।
এই গানের কৃষ্ণনামকে কৃষ্ণের আরাধনার মূলমন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। দেবকুলে এই নাম জপ করেন ইন্দ্র-ব্রহ্মা-মহেশ্বর, আর মরত্যলোকে এই নাম অবলম্বন করে ধ্যান করেন যোগী, ঋষি, অসুর ও সাধারণ মানুষ। তিনি অসীম, তাই বিশ্ব সীমায় তাঁর স্বরূপ অনুভব করা যায় না। তাই ভক্ত কবি তাঁর পার্থিব জীবনের উর্ধ্বে উঠে জীবনে-মরণের সকল আরধানার মন্ত্র হিসেবে কৃষ্ণনামকে বেছে নিয়েছেন।
বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণ। বিষ্ণু বিভিন্ন অবতার রূপে তাঁর অনন্ত লীলাকে উপস্থাপন করেছেন। সৃষ্টির ঊষালগ্নে তিনি মধু-কৈটভ অসুরদ্বয়কে বিনাশ করেছিলেন। অবতাররূপে কৃষ্ণ অত্যাচারী রাজা কংসকে হত্যা করেছিলেন। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে তিনি ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অর্জুনের রথের সারথি হয়েছিলেন। তাঁর বৃন্দাবন লীলায় তাঁর মুখে ছিল গীতা, হাতে ছিল বাঁশি আঁর নটবর রূপে পায়ে ছিল রাঙা নূপুর। তাঁর অনন্ত রূপের অংশ হিসেবে- তিনি গোকূলে ছিলেন- শ্রীকৃষ্ণ নামে নদীয়া ছিলেন শ্রচৈতন্য নামে।
বৃন্দাবনের প্রেম-যমুনার তীরে কবি খুঁজে মরেন চিরন্তন রাধিকার প্রেমসত্তাকে। তাই রাধিকা বা গোপিনীদের মতো কবি তাঁর চিরন্তন প্রেমের বৃন্দাবনে কৃষ্ণের কাছে নিজেক সম্পর্ণ করতে চান।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম থেকে নজরুল পুরোপুরি নির্বাক ও স্থবির হয়ে গিয়েছিলেন। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৫২ বৎসর।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১২১৫। পৃষ্ঠা: ৩৬৯] সূত্র: দুর্গাদাস চক্রবর্তীর খাতা।
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব। কৃষ্ণবন্দনা।