কে এলি মা টুকটুকে লাল রক্ত-চেলি প'রে (ke eli ma tuktuke lal rokto-cheli pore)

কে এলি মা টুকটুকে লাল রক্ত-চেলি প'রে।
সারা গায়ে আবির মেখে ভুবন আলো ক'রে মা ত্রিভুবন রূপে ভ'রে॥
            পায়ে লাল জবার ফুল
            কানে ঝুমকো জবার দুল্,
লাল শাপলার মালা প'রে দুলিয়ে এলোচুল 

শুভ্র-বরণ শিবকে ফাগের রঙে রঙিন ক'রে॥
ওমা! যোগমায়া, তোর রঙে রসের ব্রজে এলো হোরি,
(তোর) নাচের তালে আনন্দ কুঙ্কুম প'ড়ে ঝরি'।
            তোর চরণ-অরুণ রাগে
            মা প্রভাত-রবি রাঙে
            মণিপুর-কমলে গায়ত্রী জাগে।
(সেই) অনুরাগের রঙিন ধারা পড়ুক বুকে ঝ'রে

  • ভাবসন্ধান: শিব-পার্বতীর ইচ্ছায় আয়োজিত আদি রাসোৎসবের জন্য রচিত এই গানে পাওয়া যায় রাধাকৃষ্ণের পরিবর্তে শিব ও দুর্গাকে। এই গানে এই উৎসবের সূত্রে- দুর্গা বা কালীর মহিমাকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

    এই উৎসবে দুর্গা এসেছেন লাল রক্ত-চেলি প'রে। এখানে লাল রক্ত-চেলি দিয়ে অসুর-বিনাশিনী কালী'র রূপের ইঙ্গিত করা হয়েছে। ত্রিভুবন আলোকিত করা মাতৃরূপিণী দুর্গা এসেছেন সারা গায়ে হোরির আবির মেখে। তাঁর পায়ে লাল জবা, কানে জবার ফুল। তাঁর গলায় লাল শাপলার মালা।

    শুভ্র-বরন শিব দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাগের রঙে রঙিন হয়ে উৎসবে এসেছেন-  প্রকৃতির আদ্য শক্তি দুর্গার স্বামী হিসেবে। যেন এরই মধ্য দিয়ে কবি হরপার্বতীর মিলন ঘটিয়েছেন এই রাসোৎসবে।

    যোগমায়া-রূপী দুর্গার কল্যাণে রসের ব্রজধামে এসেছিল হোরি- উৎসব, তাঁর নাচের ছন্দে রাসের আনন্দ রাশি কুমকুম হয়ে ঝরে পড়েছিল। তাঁর অরুণ-সম চরণের রঙে রঞ্জিত হয়ে ওঠে প্রভাতের সূর্য। এই অরুণ রাগের প্রভাবেই যেন সাধকের দেহস্থিত মণিপুর চক্রে (নাভিচক্র) পরম জ্ঞানের প্রতীক হয়ে গায়ত্রী মন্ত্র জেগে ওঠে। সেই অনুরাগের রঙিন ধারা সাধকের বুকে ঝ'রে পড়ুক কবি সে কামনাই করেন।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২) -এর ১২১৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৩৭০।
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দধর্ম। শাক্ত। দুর্গা-বন্দনা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।