কেঁদো না কেঁদো না মাগো কে বলেছে কালো? (kendo na kendo mago ke bolechhe kalo?)

           কেঁদো না কেঁদো না মাগো কে বলেছে কালো?
           ইষৎ হাসিতে তোর ত্রিভুবন আলো, 
কে বলেছে কালো॥
           কে দিয়েছে গালি তোরে, মন্দ সে মন্দ!
           
যে বলেছে কালি তোরেঅন্ধ সে অন্ধ!

মোর     তারায় সে দেখে নাই তার নয়ন-তারায় নাই আলো।
           
তাই তারায় সে দেখে নাই॥
রাখে     লুকিয়ে মা তোর নয়ন-কমল (মাগো)
          
 কোটি আলোর সহস্র দল
তোর     রূপ দেখে মা লজ্জায় শিব অঙ্গে ছাই মাখালো॥
তোর     নীল-কপোলে কোটি তারা, চন্দনেরি ফোটার পারা
                   
ঝিকিমিকি করে গো 

মা        তোর দেহলতায় অতুল কোটি রবি-শশীর মুকুল
                   
ফোটে আবার ঝরে গো 
তুমি     হোমের-শিখা বহ্নি-জ্যোতি, তুমি স্বাহা দীপ্তিমতী
          আঁধার ভুবন ভবনে মা কল্যাণ-দীপ জ্বালো
                         
তুমি কল্যাণ-দীপ জ্বালো॥

  • ভাবসন্ধান: কালীর কালো রূপের ভেতর লুকোনো সৌন্দর্য, জ্ঞানলোক ও মহাজাগতিক শক্তিকে উপস্থাপন করা হয়েছে এই গানে। কবির কাছে দেবী কালো  নন। কারণ তিনি স্বয়ং অন্তহীন জ্ঞানালোক এবং কল্যাণ ও চিরশক্তির প্রতীক।

    কবি তাঁর কল্পলোকের বিহারে ভাবেন মাতৃরূপিণী কালীকে কালো বলায় যেন তিনি দুঃখে কাঁদছেন। আর তিনি ব্যথিতা দেবীর ব্যথায় ব্যথিত হয়ে তাকে যেন অপত্য স্নেহে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন- 'কেঁদো না কেঁদো না মাগো'। যেন তিনি অবুঝ কন্যারূপিণী দেবীকে তাঁর মহিমা স্মরণ করিয়ে বলেছেন- 'ষার ইষৎ হাসির আভায়তে জগৎ আলোকিত হয়ে ওঠে, তাঁকে কালো বলে গালি দিয়েছে বলেছে- তার জন্য দুঃখের কি আছে? যে তাঁকে কালি গালি দেয়, সে অন্তর্দৃষ্টিহীন, সে জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত অন্ধ।  কারণ তারা মায়ের নয়ন-তারার দীপ্তি দেখতে পায় না। মাতৃরূপিণী এই দেবী তাঁর চোখের অসীম জ্ঞানের কোটি আলোর সহস্র দলকে সংগোপনে রাখেন বলে- জ্ঞানহীনরা তাঁকে কালো বলেন।

    প্রসঙ্গক্রমে কবি কল্পবিহারে অনুভব করেন- তাঁর অপরূপ রূপ দেখে স্বয়ং মহাদেব পর্যন্ত লজ্জায় তাঁর গায়ে ছাই মেখে আড়াল করেছেন নিজেকে। তাঁর নীলাভ মুখচ্ছবিতে কোটি নক্ষত্র যেন জ্বলজ্বল করে, আর সে আভা চন্দনের বিন্দুর মতো ঝিকিমিকি করে। তাঁর দেহলতায় কোটি রবি-শশী জন্ম নেয়। তিনিই যজ্ঞের  অগ্নিশিখা, অগ্নির স্ত্রী স্বাহা'র মতো দেবীরূপিণী শক্তি। সে অগ্নিশিখার আলোয় তিনি বিশ্বজগতকে আলোকিত করেন। তাই দেবীর কাছে কবির একান্ত প্রার্থনা-যেন তিনি অন্তহীন অজ্ঞানতা ও অকল্যাণ দূর করে- ভুবন ভবনে কল্যাণ-দীপ জ্বালিয়ে দেন।

     
  • রচনাকাল:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে, এইচএমভি  রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম রেকর্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর।
     
  • গ্রন্থ: নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্‌ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। ২১৯ সংখ্যক গান]  
     
  • রেকর্ড: এইচএমভি । সেপ্টেম্বর ১৯৩৭ (ভাদ্র -আশ্বিন ১৩৪৪) । এন ৯৯৪৭। শিল্পী: যূথিকা রায় [শ্রবণ নমুনা]
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ।  [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, ষষ্ঠ খণ্ড (নজরুল ইন্সটিটিউট, ফাল্গুন ১৪০৩। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭)-এর ৯ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৫৩-৫৭।]  [নমুনা]
     
  • সুরকার: কমল দাশগুপ্ত।
  • পর্যায়:

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।