কোথায় গেলি মাগো আমার খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রেখে (kothay geli mago amar khelna diye vuliye rekhe)
কোথায় গেলি মাগো আমার খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রেখে
ক্লান্ত আমি খেলে খেলে এ সংসারে ও-মা ধুলা মেখে॥
বলেছিলি সন্ধ্যা হ'লে
ধুলা মুছে নিবি কোলে
ও-মা ছেলেরে তুই গেলি ছ'লে পাইনে সাড়া ডেকে' ডেকে'॥
এ কী খেলার পুতুল মা গো দিয়েছিলি মন ভুলাতে
আধেক তাহার হারিয়ে গেছে আধেক ভেঙে আছে হাতে।
এ পুতুলও লাগছে মা ভার
তোর পুতুল তুই নে গো এবার
এখন সন্ধ্যা হলো ও-মা সন্ধ্যা হলো নাম্লো আঁধার
ঘুম পাড়া মা আঁচল ঢেকে॥
- ভাবসন্ধান: মাতৃরূপিণী মহামায়া সংসার খেলায়, এই অবোধ সন্তানের হাতে সংসারের খেলনা ধরিয়ে দিয়ে নিজে লুকিয়ে থাকেন। সারা জীবন সংসারের সেই খেলায় ক্লান্ত কবি নানাভাবে মাতৃরূপিণী দেবীকে ডেকেছেন, যেন তিনি অপত্যস্নেহ তাঁর কোলে আশ্রয় দেন। দেবী সে আহ্বানে সাড়া দেন নি। এই গানে মাতৃরূপিণী দেবীর কাছে কবির অভিমানে ভরা অভিব্যক্তি উপস্থাপিত হয়েছে।
দেবী আশ্বাস দিয়েছিলেন- জীবন সায়াহ্নে তিনি এই সন্তানকে অপত্যস্নেহে সংসারের সকল কালিমা ধুয়ে মুছে তাঁর কোলে আশ্রয় দেবেন। কিন্তু ছলনা করে তিনি ছেড়ে গেছেন সন্তানকে। তাই কবি তাঁকে ডেকে ডেকে সাড়া পান নি।
সন্তানের মন ভুলাতে তিনি সংসারের যে খেলনা ধরিয়ে দিয়েছিলেন, তার অর্ধেক হারিয়ে গেছে, বাকিটা ভেঙে গেছে। হাত এখান সংসারের ভাঙা খেলনার মূল্যহীন জঞ্জালে ভরা। তাই কবি তাঁর দেওয়া সকল খেলনা ফিরিয়ে দিতে চান। তিনি অনুভব করেন- জীবন সায়াহ্নে সকল খেলার অবসান হয়েছে। এবার কবি আশ্রয় চান মায়ের আঁচল তলে- চিরনিদ্রার কোলে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৩) মাসে, গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ৩ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১৩৫ সংখ্যক গান।
- রেকর্ড: এইচএমভি। সেপ্টেম্বর ১৯৩৬ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৩)। এন ৯৭৮১। মৃণালকান্তি ঘোষ [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: আহসান মুর্শেদ। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (ঊনবিংশ খণ্ড)। ১২ সংখ্যক গান] [নমুনা]
- সুরকার: নজরুল ইসলাম
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম, শাক্ত। দুর্গা। প্রার্থনা
- সুরাঙ্গ: স্বকীয়
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: নর্সা