কোন রস-যমুনার কূলে বেণু-কুঞ্জে (kon rosh jomunar kule benu-kunje)

কোন রস-যমুনার কূলে বেণু-কুঞ্জে
হে কিশোর বেণুকা বাজাও।
মোর অনুরাগ যায় সেথা, তনু যেতে নারে,
তুমি সেই ব্রজের পথ দেখাও॥
মোর অন্ধ আঁখি কাঁদে চাঁদের তৃষায়
তব পানে হাত তুলে রাত কেটে যায়,
বঁধু, এই ভিখারিনী সেই মাধুকরী চায় 

মধুবনে, গোপীগণে যা মধু দাও॥
প্রেমহীন-নীরস জীবন ল'য়ে
পথে পথে ফিরি বৈরাগিনী হয়ে,
বুঝি আমি চাই তব প্রেম নাহি পাই 

কৃপা কর প্রেমময়, তুমি মোরে চাও॥

  • ভাবসন্ধান: কোনো এক কৃষ্ণ-প্রেমিকার অতলস্পর্শী প্রেম ও বিচ্ছেদের সুর যুগলবন্দী হয়ে এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে। কোন রস-যমুনার কূলের বেণুকুঞ্জে কিশোর রাখাল বেশে কৃষ্ণ তাঁর প্রেমের বাঁশী বাজাচ্ছেন, এই কৃষ্ণ-প্রেমিকা জানেন না। সে সুরের সাথে তাঁর অসীম বিরহ-বেদনা বিরামহীন দুঃখ-অভিমান বিরহিণীর মনে বাজে। কিন্তু সে বাঁশীর সুরের সন্ধান করে তিনি অভিসারে যেতে পারেন না। শুধু তাঁর অন্তহীন মিলন-বিরহের আশা-নিরাশার অনুরাগ বাঁশীর সুরে মিশে হারিয়ে যায়। তাই কৃষ্ণের কাছে তাঁর প্রার্থনা, তিনি যেন তাঁর সাথে ব্রজের অভিসারে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দেন।

    তাঁর বিরহ-বেদনার চিত্তাকাশে অন্ধ আঁখি, চন্দ্ররূপী কৃষ্ণের দর্শনের আশায় মিলনের দুহাত বাড়িয়ে তিনি প্রতীক্ষা করেন। কৃষ্ণ গোপীদের যে প্রেমমধু দান করেন, সেই মধুই তিনি ভিখারিনী মতো কৃষ্ণের কাছে থেকে সংগ্রহ করতে চান। এই কৃষ্ণ-বিরহিণী, প্রেম-রসহীনা হয়ে বৈরাগিণীর বেশে ঘুরে বেড়ান পথে পথে। তাই প্রেমবঞ্চিতা এই প্রেমিকা প্রেমময় কৃষ্ণের কাছেই তাঁর প্রেমের ভিক্ষা প্রার্থনা করেছেন, যেন কৃপা করে তাঁর প্রেমের আহ্বানে সাড়া দেন তিনি।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৮) মাসে  হিন্দুস্তান রেকর্ড কোম্পানি গানটি প্রথম রেকর্ড করে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪২ বৎসর ৪ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • বনগীতি [দ্বিতীয় খণ্ড]
      • দ্বিতীয় সংস্করণ [১৩৫৯ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ (২৫ মে, ১৯৫২)]
      • নজরুল রচনাবলী সপ্তম খণ্ড [কার্তিক ১৪১৯, নভেম্বর ২০১২। বনগীতি দ্বিতীয় খণ্ড। ১৫। পৃষ্ঠা ১২১]
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১২৮৬ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৩৯০।
       
  • রেকর্ড:
    • হিন্দুস্তান [অক্টোবর ১৯৪১ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৮)। নম্বর এইচ ৯৫৮। শিল্পী: রেণুকা দাশগুপ্ত। সুর: নজরুল (ঠুং-কীর্তন)। [শ্রবণ নমুনা]
  • সুরকার: নজরুল ইসলাম।
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব। কৃষ্ণ-প্রেম
    • সুরাঙ্গ: কীর্তন
      • তাল: তালছাড়া
      • গ্রহস্বর: গম

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।