খড়ের প্রতিমা পূজিস্ রে তোরা, মাকে ত' তোরা পূজিস্নে (khorer protima pujish re tora, make to tora pujish ne)
খড়ের প্রতিমা পূজিস্ রে তোরা, মাকে ত' তোরা পূজিস্নে!
প্রতি মা'র মাঝে প্রতিমা বিরাজে (ঘরে ঘরে ওরে)
হায় রে অন্ধ, বুঝিস্নে।
বছর বছর মাতৃ পূজার ক'রে যাস্ অভিনয়
ভীরু সন্তানে হেরি লজ্জায় মাও যে পাষাণময়,
মাকে জিনিতে সাধন-সমরে সাধক ত'কেহ বুঝিস্নে।
মাটির প্রতিমা গ'লে যায় জলে, বিজয়ায় ভেসে যায়,
আকাশে-বাতাসে মা'র স্নেহ জাগে অতন্দ্র করুণায়।
তোরই আশে-পাশে তাঁর কৃপা হাসে ─
কেন সেই পথে তাঁরে খুঁজিস্নে॥
- ভাবসন্ধান: মন্মথ রায়ের রচিত বেতার নাটিকা নজরুলের রচিত 'বিজয়া' নাটিকটি 'বিজয়া দশমী' সঙ্গীতালেখ্য নামে প্রচারিত হয়েছিল। এই নাটিকার এটি ছিল পঞ্চম গান। নাটিকাটিতে এই গানটি পরিবেশিত হয়েছে জনৈক ভিখারিণীর গান হিসেবে।
ভিখারিণী তাঁর বোধ ও আত্মদর্শনে অনুভব করেছেন- মর্তবাসী খড়ের প্রতিমাকে আড়ম্বরের সাথে পূজা করে বটে- কিন্তু চিরন্তন মাতৃরূপিণী দেবীকে পূজা করে না। জগৎসংসারের ঘরে ঘরে প্রতিটি মায়ের মাঝেই মাতৃরূপিণী দেবীর মাতৃপ্রতিমা বিরাজ করে, অন্তর্দৃষ্টিহীন অন্ধ মানব তার সন্ধান করে না। তাই বছরের পর বছর মাতৃপূজার অভিনয় হয় বটে, কিন্তু চিরন্তন মায়ের পূজা হয় না। এই সব ভীরু সন্তানদের দেখে মাতৃরূপিনী দেবী লজ্জায় পাষাণ হয়ে যান। মাকে জয় করতে হলে যে সাধকের মতো সাধনার প্রয়ো্জন, তা কেউ উপলব্ধি করে না।
বিজয়ার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মাটির প্রতিমা জলে গলে যায়। তবু মায়ের স্নেহ আকাশে বাতাসে জেগে রয় অতন্দ্র করুণায়। তাঁর সে অদৃশ্য স্নেহকরুণা চারপাশে ঘুরে মরে- কিন্তু কেউ তার সন্ধান করে না। তাই মর্তবাসীর কাছে দেবী খড়ের প্রতিমাই হয়ে রয়ে যায়।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। বেতারজগৎ পত্রিকার '১৬ অক্টোবর ১৯৩৯' (বুধবার ১ কার্তিক ১৩৪৬) সংখ্যায় কাজী নজরুল ইসলামের রচিত 'বিজয়া' নামক গীতি-আলেখ্য প্রচারিত হয়েছিল। এই গীতি-আলেখ্যে এই গানটি ছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ৪০ বৎসর ছিল ৫ মাস।
- বেতার:
- বিজয়া। সঙ্গীতালেখ্য। কলিকাতা-ক। প্রথম অধিবেশন। ২২শে অক্টোবর, ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ (রবিবার, ৫ কার্তিক ১৩৪৬), সকাল ৯-৯.৪৪ মিনিট]।
[সূত্র:- বেতারজগৎ। ১০ম বর্ষ ২০শ সংখ্যা। বিজয়া দশমী [১৬ অক্টোবর ১৯৩৯' (বুধবার ১ কার্তিক ১৩৪৬) সংখ্যা]
- The Indian Listener, Vol IV. No 20, 22 October, 1939, Page : 1439 ]
- বিজয়া। সঙ্গীতালেখ্য। কলিকাতা-ক। প্রথম অধিবেশন। ২২শে অক্টোবর, ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ (রবিবার, ৫ কার্তিক ১৩৪৬), সকাল ৯-৯.৪৪ মিনিট]।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, [নজরুল ইনস্টিটিউট, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ। ১২৪২ সংখ্যক গান]
- পত্রিকা: বেতার জগৎ। ১০ম বর্ষ ২০শ সংখ্যা। জনৈক ভিখারিণীর গান। পৃষ্ঠা ৭৬৬
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- নিতাই ঘটক। সঙ্গীতাঞ্জলি। দ্বিতীয় খণ্ড। দ্বিতীয় সংস্করণ। শ্যামাপূজা, ১৩৮৩। গান সংখ্যা ৩। শিরোনাম: জনৈকা ভিখারিণী গান। ৭৩-৭৫। [নমুনা]
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। দুর্গা।
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: পা