খেলিছে জলদেবী সুনীল সাগর জলে (khelichhe jolodebi shunil shagor jole)
খেলিছে জলদেবী সুনীল সাগর জলে।
তরঙ্গ-লহর তোলে লীলায়িত কুন্তলে॥
ছল-ছল ঊর্মি-নূপুর
স্রোত-নীরে বাজে সুমধুর,
চল-চঞ্চল বাজে কাঁকন কেয়ূর
ঝিনুকের মেখলা কটিতে দোলে॥
আনমনে খেলে জল-বালিকা
খুলে পড়ে মুকুতা মালিকা
হরষিত পারাবারে ঊর্মি জাগে
লাজে চাঁদ লুকালো গগন তলে॥
- ভাবসন্ধান: এটি একটি প্রকৃতি পর্যায়ের জাগতিক উপপর্যায়ের সাগর বিষয়ক গান। গানটিতে কবি সুনীল সাগরকে লীলমায়ী জলদেবীর রূপকতায় উপস্থাপন করেছেন। সাগরের তরঙ্গমালা কবির কাছে এই দেবীর লীলায়িত কেশরাশি। কবি সাগরের প্রবহমান জলস্রোতের বুকে সৃষ্ট ঢেউয়ের ছলছল ধ্বনিকে এই দেবীর নূপুরের ঝঙ্কার, হাতের কাঁকন, এবং বাহুর কেয়ুরের সাথে তুলনা করেছেন। আর সাগরে ঢেউয়ে ঢেউয়ে আন্দোলিত ঝিনুকরাশিকে তুলনা করেছেনে জলদেবীর কোমরের দোলায়িত অলঙ্কার হিসেবে।
জলদেবী আপন মনে জলবালিকা হয়ে যখন খেলা করেন, তাঁর মুক্তার মালা খুলে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর খেলার আনন্দই যেন সমুদ্রের ঢেউ হয়ে জেগে ওঠে। সে আনন্দের ধারায় ম্লান করে দেয় চাঁদের আনন্দ-জোৎস্নাকে। তাই যেন লজ্জায় আকাশের চাঁদও হারিয়ে যায়।
এ সবই কবি মনের কল্প-বাস্তবের লীলা, যা এই গানে নতুব করে সৃষ্টি করেছেন শৈল্পিকবোধ থেকে। মূলত কবি এই গানে সাগরে নানা উপকরণের মধ্যয়ে তার সৌন্দর্যকে নানা রূপকতায় উপস্থান করছেন। এর ঢেউয়ের দোলায়িত দৃশ্য ও ধ্বনির নান্দনিক ছন্দ, ঢেউয়ের সাথে সাগর তীরে ভেসে আসা দোলায়িত ঝিনুকরাশি এবং তার ঝিনুকমুক্ত মুক্তা- এ সবই সাগরের সৌন্দর্যের উপকরণ। সব মিলিয়ে কবির কাছে সাগর হয়ে ওঠেছে কল্পলোকের লীলায়িতা জলদেবী।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪২) মাসে এইচএমভি এই গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই সময় এই সময় নজরুলের বয়স ৩৬ বৎসর ছিল ৯ মাস।
- রেকর্ড: এইচএমভি [মার্চ ১৯৩৬ ( (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪২)। এন. ৭৪৯৪। শিল্পী: মিস্ হরিমতী] [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: রশিদুন্ নবী । নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (দশম খণ্ড)। প্রথম প্রকাশ, ৩ ফাল্গুন, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ/ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ। সপ্তম গান] [নমুনা]
- পর্যায়
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (জাগতিক, সমুদ্র)
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: হ্মপা