খোদার হবিব হলেন নাজেল খোদার ঘর ঐ কাবার পাশে (khodar hobib holen najel khodar ghor oi kabar pashe)

খোদার হবিব হলেন নাজেল খোদার ঘর ঐ কাবার পাশে।
ঝুঁকে' প'ড়ে আর্শ কুর্‌সি, চাঁদ সূরয তায় দেখতে আসে॥
ভেঙে পড়ে মূরত মন্দির, লা'ত মানাত, শয়তানী তখ্‌ত,
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু'র উঠিছে তক্‌বীর আকাশে॥
খুশির মউজ তুফান তোরা দেখে যা মরুভূমে,
কোহ-ই-তূরের পাথরে আজ বেহেশ্‌তী ফুল ফুটে' হাসে॥
য়্যেতিম-তারণ য়্যেতিম হয়ে এলো রে এই দুনিয়ায়,
য়্যেতিম মানুষ-জাতির ব্যথা নৈলে বুঝ্‌ত না সে॥
সূর্য ওঠে, ওঠে রে চাঁদ, মনের আঁধার যায় না তায়,
হৃদ-গগন যে কর্‌ল রওশন্, সেই মোহাম্মদ ঐ রে হাসে।
আপন পুণ্যের বদ্‌লাতে যে মাগিল মুক্তি সবার,
উম্মতি উম্মতি ক'য়ে দেখ্ আঁখি তাঁর জলে ভাসে॥

  • ভাবসন্ধান: এই গানে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পৃথিবীতে আগমন এবং তাঁর মহিমাকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

    তিনি খোদার হাবিব (বন্ধু)। তাঁর জন্ম হয়েছিল খোদার ঘর নামে খ্যাত কাবার পাশে। কবি কল্পলোকের বিহারে দেখেছেন- তাঁর জন্মলগ্নে তাঁকে দেখার জন্য আর্শ কুরসি (খোদার সিংহাসন) নেমে এসেছিল। আকাশের চাঁদ এবং সূর্য পর্যন্ত ঝুঁকে পড়ছিল তাঁর সম্মানার্থে।  তাঁর জন্মের সময় ভেঙে পরেছিল দেবমন্দির, প্রাক ইসালমী জগতের দেবী মূর্তি লা'ত, মানাত-এর মত বারবের পৌরাণিক দেবীদের প্রতত অটল বিশ্বাস, টলে উঠেছিল শয়তানের সিংহাসন। এখানে এই বাক্যের মধ্য দিয়ে কবি বলতে চেয়েছেন- তাঁর জন্মের কারণে- শয়তানের প্ররোচিত আরবে প্রচলিত পৌত্তালিক পূজার অবসান হয়েছিল। তাঁর আবির্ভাবে আকাশে তাঁরই তক্‌বীর (মহিমা ঘোষণা) হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু'র (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই)। 

    কবি তাঁর কল্পচোখে অনুভব করেছেন- তাঁকে দেখে মরুভূমিতে উঠেছিল খুশির বন্যা (মউজ তুফান)। যেন কোহ-ই-তূরের কঠোর পাথরে (ঐতিহাসিক পাহাড়, যেখানে মূসা (আঃ) আল্লাহর জ্যোতি দেখেছিলেন)  ফুটে উঠেছিল ছিল বেহেশ্‌তি ফুল।

    তিনি নিজে এতিম হয়ে অন্যান্য এতিমের দুঃখমোচনের জন্য। বাহ্য জগতকে আলোকিত করে সূর্য ও চন্দ্র। কিন্তু মনের জগতকে আলোকিত করেন একমাত্র নবি। তাঁর সবচেয়ে বড় মহিমা হলো- নিজের পূণ্যের প্রতিদানে সবার মুক্তি কথা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর উম্মতের (অনুসারী) অসহায় পরিনাম ভেবে, তাঁর চোখে- মুখে হাহাকার  উঠেছে- উম্মতি! উম্মতি! (আমার জাতি! আমার জাতি!)।  এর ভিতর দিয়ে তাঁর উম্মতের প্রতি গভীরতম স্নেহ এবং শাফায়াতের (সুপারিশ) প্রতিশ্রুতি উপস্থাপিত হয়েছে।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। এইচএমভি কোম্পানির সাথে নজরুলের গান রেকর্ডের একটি চুক্তি হয়েছিল ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মে (সোমবার ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৪০) তারিখে। এই চুক্তিতে গানটি ছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ১ মাস।।
     
  • গ্রন্থ:
    • গুলবাগিচা
      • প্রথম সংস্করণ [১৩ আষাঢ় ১৩৪০, ২৭ জুন ১৯৩৩। ভৈরবী মিশ্র-কার্ফা। পৃষ্ঠা: ১০৪-১০৫]
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংকলন। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। গুল-বাগিচা। গান সংখ্যা ৮৪। ভৈরবী মিশ্র-কার্ফা। পৃষ্ঠা ২৭৭-২৭৮]
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১২৪০।   রাগ: ভৈরবী মিশ্র , তাল: কাহার্‌বা পৃষ্ঠা: ৩৭৬।]
  • রেকর্ড: এইচএমভি কোম্পানির সাথে নজরুলের গান রেকর্ডের একটি চুক্তি হয়েছিল ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মে (সোমবার ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০) তারিখে। এই চুক্তিতে গানটি ছিল।
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলাম। নাত-এ রসুল

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।