গগনে খেলায় সাপ বরষা-বেদিনী (gogone khelay shap borosha bedini)
গগনে খেলায় সাপ বরষা-বেদিনী ।
দূরে দাঁড়ায়ে দেখে ভয় -ভীতা মেদিনী॥
দেখায় মেঘের ঝাপি তুলিয়া
ফণা তুলি' বিদ্যুৎ-ফণি ওঠে দুলিয়া,
ঝড়ের তুব্ড়িতে বাজে তার অশান্ত রাগিণী॥
মহাসাগরে লুটায় তার সর্পিল অঞ্চল
দিগন্তে দুলে তার এলোকেশ পিঙ্গল
ছিটায় মন্ত্রপূত ধারাজল অবিরল তন্বী-মোহিনী॥
অশনি-ডমরু ওঠে দমকি'
পাতালে বাসুকি ওঠে চমকি'
তার ডাক শুনে ছুটে আসে নদীজলে যেন পাহাড়িয়া নাগিনী॥
- ভাবসন্ধান: এই গানে বর্ষাকে কবি বেদেনীর হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আকাশে বজ্ররূপী সাপ নিয়ে খেলা করে এই বেদনী। আর সেই ভয়ঙ্কর খেলা দেখে- দূরের ভীতা পৃথিবী। বর্ষার আগমনে মেঘমালার বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়ো বৃষ্টি, উন্মত্ত সাগর এবং পাহাড়ি নদী যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে, এই গানে তাই তুলে ধরা হয়েছে ভয়ঙ্কর সুন্দর হিসেবে।
বর্ষা-বেদিনী মেঘের ঝাঁপি খুলে পৃথিবীকে তার বজ্র-সাপ দেখায়। ঝাঁপি-মুক্ত সে সাপ বিদ্যুৎ ফণা তুলে দুলে ওঠে। ঝড়ের তুবড়ির সাথে তার অশান্ত রাগিণী ধ্বনিত হয়। এই বেদিনীর সর্পিল মেঘাঞ্চল মহাসাগরে লুটায়। দিগন্তে দুলে উঠে মেঘের এলোকেশ। অবিরল ছিটায় তার বৃষ্টিরূপী মন্ত্রপূত ধারাজল। আকাশ জুড়ে বাজে বজ্র-ডমরু। তার শব্দে যেন পাতালে বাসুকি (অনন্তনাগ) চমকে ওঠে। প্রবল বর্ষণে জেগে ওঠে পাহাড়ি নদী। যেন সে বেদেনীর ডাকে সগর্জনে এঁকেবেঁকে ছুটে আসে পাহাড়ি নদী নাগিনীর বেশে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট (১৬ শ্রাবণ-১৪ ভাদ্র ১৩৪৫) মাসে এইচএমভি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ১ মাস।
- রেকর্ড: এইচএমভি। আগষ্ট ১৯৩৮ (১৬ শ্রাবণ-১৪ ভাদ্র ১৩৪৫)। এন ১৭১৭৮। শিল্পী: রেবা সোম, পদ্মরাণী চট্টোপাধ্যায় ও অনিমা মুখোপাধ্যায় [শ্রবন নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, সপ্তম খণ্ড নজরুল ইন্সটিটিউট ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ/ ২৫শে মে, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ। অষ্টম গান। পৃষ্ঠ ৬০-৬২] [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (ঋতু, বর্ষা)
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: স