আসিলে এ ভাঙা ঘরে কে মোর (asile e bhanga ghore )
আসিলে এ ভাঙা ঘরে কে মোর রাঙা অতিথি।
হরষে বরিষে বারি শাওন-গগন তিতি'॥
বকুল-বনের সাকি নটীন্ পুবালি হাওয়া
বিলায় সুরভি-সুরা মাতায় কানন-বীথি॥
তিতির শিখীর সাথে নোটন-কপোতী নাচে;
ঝিঁঝির ঝিয়ারি গাহে ঝুমুর কাজরি-গীতি।
হিঙুল হিজল-তলে ডাহুক পিছল-আঁখি,
বধূর তমাল-চোখে ঘনায় নিশীথ-ভীতি।
তিমির-ময়ূর আজি তারার পেখম খোলে
জড়ায় গগন-গলে চাঁদের ষোড়শী তিথি॥
- ভাবার্থ: প্রকৃতিতে বর্ষারাণী আসে তার অতুল গৌরবে। কবি মনে করেন তাঁর মনোলোকে এই অতিথির যোগ্য স্থান নেই, তাই সুসজ্জিতা রাঙা এই অতিথিকে বর্ণ নিতে কবির কুণ্ঠা। এই গানে স্থায়ীতে কবি তাঁর মনোলোকের ঘরকে পরম দীনতায় ভরা ভাঙাঘর হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এই অতিথির বর্ণোৎসবে সমগ্র চরাচর মেতে উঠে। এই উৎসবের বিবরণের ধারাবাহিক বর্ণনার মধ্য দিয়ে কবি বর্ষারাণীর অপরূপ ছবি এঁকেছেন। তার আগমনে শ্রাবণের গগন সিক্ত করে পরমানন্দে বারিধার বর্ষিত হয়। নৃত্যময়ী পূবালী হাওয়া সাকি (সুরা পরিবেশনকারিণী) হয়ে বকুল বনের সুরাভি-সুরায় যেন বনভূমিকে মাতাল করে দেয়। তিতির ময়ুরের সাথে নাচে নোটন-কপোতী (ঝূঁটিযুক্ত কবুতর বিশেষ)। সেই সাথে ঝিঁঝির-কন্যা যেন তারই জন্য বর্ষার ঝুমুর কাজরি গানে মেতে ওঠে। তার আগমনে হিঙুল, হিজলের আশ্রয়ে থাকা ডাহুকের দৃষ্টিবিভ্রমের প্রণয়-আহ্বানে, বধুর শ্যামল চোখের ঘনীভূত রাত্রির ভয়ে বর্ষা হয়ে ওঠে মহিমান্বিতা। ময়ূরের কালো পেখমে ফুটে ওঠা তারকারাশি এবং চাঁদের ষোড়শ তিথি বর্ষার পক্ষকালের পুষ্প গগনের কণ্ঠ জড়ানো সৌন্দর্যে বর্ষারাণী হয়ে ওঠে সর্বাঙ্গসুন্দরী।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। গানটি 'নওরোজ' পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট ১৯২৭) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৮ বৎসর ২ মাস।
- পত্রিকা: নওরোজ। শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট ১৯২৭)।
- গ্রন্থ: বুলবুল
- প্রথম সংস্করণ [কার্তিক ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ। গান ২৫। পিলু-ভৈরবী-কাহারবা]
- নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। বুলবুল। গান ২৫। পিলু-ভৈরবী-কাহারবা। পৃষ্ঠা: ১৭১]
- রেকর্ড: এইচএমভি। এপ্রিল ১৯৩২ (চৈত্র ১৩৩৮- বৈশাখ ১৩৩৯)। পি ১১৭৪৩। শিল্পী: আঙ্গুরবালা [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ ও ব্রহ্মমোহন ঠাকুর। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, একাদশ খণ্ড (নজরুল ইনস্টিটিউট জুন ১৯৯৭)] তৃতীয় গান [নমুনা]
- পর্যায়: