গিরিধারী গোপাল ব্রজ গোপ দুলাল (giridhari gopal brojo gop dulal)
গিরিধারী গোপাল ব্রজ গোপ দুলাল
অপরূপ ঘনশ্যাম নব তরুণ তমাল॥
বিশাখার পটে আঁকা মধুর নিরুপম
কান্ত ললিতার শ্রীরাধা প্রীতম
রুক্মিণী-পতি হরি যাদব ভূপাল॥
যশোদার স্নেহডোরে বাঁধা ননীচোর
নন্দের নয়ন-আনন্দ-কিশোর
শ্রীদাম-সুদাম-সখা গোঠের রাখাল॥
কংস-নিসূদন কৃষ্ণ মথুরাপতি
গীতা উদ্গাতা পার্থসারথি
পূর্ণ ভগবান বিরাট বিশাল॥
- ভাবসন্ধান: বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণের মহিমা এই গানে উপস্থাপন করা হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন পরিচিতি ও অবতারের গুণাবলী তুলে ধরা হয়েছে- তাঁর বাল্যলীলা থেকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ পর্যন্ত। তবে এই গানে কৃষ্ণচরিতের ধারবাহিকতা রক্ষা হয় নি।
গানের শুরুতে কৃষ্ণের পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- গিরিধারী (ইন্দ্রের আদেশে ব্রজে প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে- কৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বত ধারণ করে ব্রজবাসীদের রক্ষা করেছিলেন), গোপাল (ব্রজে গরুর রাখাল এবং গোসম্পদ রক্ষাকারী), গোপ দুলাল (ব্রজের গোপদের আদুরে কিশোর অর্থে)। তাঁর গায়ের রঙ ছিল ঘনশ্যাম ও নব তরুণ তমাল (বর্ষাকালের গভীর মেঘের মতো তাঁর শরীরের শ্যামল বা নীলাভ-কালো বর্ণকে বোঝায়) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 'নব তরুণ' শব্দটি তাঁর রূপের তারুণ্য, সতেজতা এবং কমনীয়তাকে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি ছিলেন বিশাখা (শ্রীরাধার এক প্রধান সখী)-এর মনোলোকের সুদর্শন চিত্রস্বরূপ। তিনি ললিতার (শ্রীরাধার আরেক প্রধান সখী) ছিলেন প্রিয়। সর্বোপরি তিনি ছিলেন শ্রীরাধার প্রীতম (প্রেয়সী, প্রিয়তম)। তিনি বিদর্ভরাজ ভীষ্মকের কন্যা রুক্মিণী (বিদর্ভরাজ ভীষ্মকের কন্যা) বিবাহ করেছিলেন। মথুরায় কংসবধের পর তিনি যাদবের রাজা হন।
এই ঘটনার আগে তিনি যশোদার আদর স্নেহে প্রতিপালিত হয়েছেন। সেখানে কিশোরসূলভ লীলায় ননী চুরি করে খেতেন বলে- ননীচোর নামে আখ্যায়িত হয়েছেন। তিনি ছিলেন তাঁর পালক পিতা নন্দের নয়নের আনন্দ-দায়ক তাই তিনি আনন্দ-কিশোর। শ্রীদাম-সুদাম তাঁর গোঠের বন্ধু ছিলেন। তিনি মধুরাপতি কংসকে হত্যা করেছিলেন। গীতা প্রথম তাঁর কণ্ঠ উচ্চারিত হয়েছিল বলে, বৈদিক উদ্গাতা গানের গায়কের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে পার্থের (অর্জুন) রথের সারথি ছিলেন বলে- তিনি পার্থসারথি। তিনি বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার ছিলেন বলে পূর্ণ ভগবান নামে আখ্যায়িত করেছেন। সব শেষে তিনি কৃষ্ণের মহিমাকে বিরাট বিশাল অভিধায় অভিহিত করেছেন।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪৪) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ৮ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২) -এর ৭৪৮ সংখ্যক গান।
- রেকর্ড: এইচএমভি। [ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪৪)। এন ১৭০৩৯। শিল্পী: সুধীরা সেনগুপ্তা ও ভ্রাতৃদ্বয়। সুর: কমল দাশগুপ্ত]
- বেতার (কলকাতা): সঙ্গীতানুষ্ঠান: গিরিধারী শ্রীকৃষ্ণ। ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪০ (সোমবার ১৪ আশ্বিন ১৩৪৭)। প্রচার সময়: সন্ধ্যা ৬.৪৫।
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সেলিনা হোসেন [একবিংশ খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] নবম গান। [নমুনা]
- সুরকার: কমল দাশগুপ্ত
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম, বৈষ্ণব। কৃষ্ণ-বন্দনা
- সুরাঙ্গ: ভজন
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: সা