গিরিধারী লাল কৃষ্ণ গোপাল (giridhari lal krishno gopal)

গিরিধারী লাল কৃষ্ণ গোপাল যুগে যুগে হ’য়ো প্রিয়
জনমে জনমে বঁধু তব প্রেমে আমারে ঝুরিতে দিও॥
        তুমি চির চঞ্চল চির পলাতকা
        প্রেমে বাঁধা প’ড়ে হ’য়ো মোর সখা
মোর জাতি কুল মান তনু মন প্রাণ হে কিশোর হ’রে নিও॥
রাধিকার সম কুব্জার সম রুক্সিণী সম মোরে
গোকুল মথুরা দ্বারকায় নাথ রেখো তব সাথী করে।
        গোপনে চেয়ো সব শত গোপীকায়
        চন্দ্রাবলী ও সত্যভামায়
তেমনি হে নাথ চাহিও আমায় লুকায়ে ভালোবাসিও॥

  • ভাবসন্ধান: কোনো এক কৃষ্ণ সাধিকা শ্রীকৃষ্ণের কাছে যুগে যুগে তাঁর প্রিয়া হওয়ার বাসনা এবং চিরন্তন প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রার্থনা এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে। এই সাধিকা  শ্রীকৃষ্ণকে জন্ম-জন্মান্তরের নিজের সর্বস্ব তাঁর চরণে সমর্পণ করে বন্ধু হিসেবে পেতে চান, তাঁর জীবন যেন কৃষ্ণের মধুর বিরহ এবং লুকানো ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকুক, এই তাঁর একমাত্র কামনা।

    গানের শুরুতে কৃষ্ণের তিনটি নাম- গিরিধারী, কৃষ্ণ ও গোপাল ব্যবহার করা হয়েছে কৃষ্ণের বহুরূপতার প্রতীক হিসেবে, আর লাল শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে প্রিয়তম অর্থে। এই বহুরূপী প্রিয়তম কৃষ্ণের কাছে এই সাধিকার একান্ত প্রার্থনা, যেন কৃষ্ণি প্রতিটি যুগে তাঁর প্রিয়জন হয়ে বিরাজ করেন এবং প্রতি জন্মেই যেন তিনি কেবল তাঁর প্রেমের বিরহ-যন্ত্রণা ভোগ করেন। কারণ তাঁর কাছে কৃষ্ণ-বিরহও মধুর।

    এই সাধিকা জানেন কৃষ্ণ চির চঞ্চল চির পলাতকা, তবুও তাঁর দুর্লভ প্রত্যাশা, যেন তিনি তাঁর প্রেমে বাঁধা পড়ে তাঁর বন্ধু হয়ে সঙ্গ দেন। এর জন্য তিনি তাঁর জাতি, কুল-মান, দেহ-মন কিশোর কৃষ্ণের কাছে সমর্পণ করতে চান। কৃষ্ণের কাছে তাঁর একান্ত অনুরোধ, যেন তিনি এসব প্রেমের অর্ঘ হিসেবে গ্রহণ করেন।

    গোকুলে কৃষ্ণ যেমন রাধিকার কাছে ছিলেন প্রেমিক হয়ে, মথুরায় কুরূপা কুব্জার সুদর্শনা হয়ে ওঠার দেবতা হয়ে, দ্বারকায় রুক্মিনীর কাছে স্বামী হয়ে, তেমনি করে তিনি যেন তাঁকে রাখেন তাঁর সাথী করে।

    রাধাকে লুকিয়ে কৃষ্ণ যেমন শত গোপিকা এবং চন্দ্রাবলীকে প্রণয় দান করেছেন, প্রিয়তম স্ত্রী রুক্মিনীকে লুকিয়ে তাঁর অপর স্ত্রী সত্যভামাকে ভালোবেসেছেন। এই সাধিকার নিবেদন, তিনি না হয় তেমনি করে তাঁকে লোকচক্ষুর আড়ালে বা গোপনে বিশেষভাবে ভালোবাসেন। 

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের (পৌষ-মাঘ ১৩৪৫) মাসে, টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে এই গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ৭ মাস।
     
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৭৯১]
  • রেকর্ড:
    • টুইন [জানুয়ারি ১৯৩৯ (পৌষ-মাঘ ১৩৪৫)। এফটি ১২৬৬৯। শিল্পী: শোভারাণী দে। সুর: সুখমায় গাঙ্গুলী]
    • এইচএমভি [জুন ১৯৪৬ (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৫৩)। এন ২৭৫৯৭। শিল্পী: রেবা সোম। সুর: শৈলেশ দত্তগুপ্ত][শ্রবণ নমুনা]
  • বেতার: সঙ্গীতানুষ্ঠান: গিরিধারী শ্রীকৃষ্ণ। ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪০ (সোমবার ১৪ আশ্বিন ১৩৪৭)। প্রচার সময়: সন্ধ্যা ৬.৪৫।
     
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব। কৃষ্ণ-সাধিকার প্রণয়
    • সুরাঙ্গ: ভজন
    • তাল: কাহারবা
    • গ্রহস্বর:
      • স্ন [নিখিলরঞ্জন নাথ-কৃত স্বরলিপি]
      • মা [ ইদ্‌রিস আলী-কৃত স্বরলিপি]

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।