গুরুমন্ত্র তোমার উঠল জ্ব'লে হোমের শিখার মত (gurumontro tomar uthlo jwole)

গুরুমন্ত্র তোমার উঠল জ্ব'লে হোমের শিখার মত।
এক নিমেষে ভস্ম হ'ল পাপ-তাপ মোর যত॥
        চির-আঁধার ছিল আমার হিয়া
        তুমি এলে মন্দ্র-প্রদীপ নিয়া,
হল চকিতে সেই দীপালোকে মনের আঁধার গত॥
উজ্জ্বল মোর ঘন-দেউলে কোন্ সে আদি ঋষি,
গভীর উদার মন্ত্র তোমার জপে দিবা-নিশি।
        রিপু দানব যথা ক'রত বাস
        সেই মন হ'ল আজ আনন্দ-কৈলাস,
সে-কৈলাসে তুমি শিব, আমি দীন প্রণত॥

  • ভাবসন্ধান: গুরুর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে এই গানে। গুরুর জ্ঞানময় উপদেশ (গুরুমন্ত্র) কিভাবে কবির জীবনকে পাপমুক্ত, আলোকিত এবং রিপুশূন্য করে পরমানন্দের পথে পরিচালিত করতে পারে, তাই এই গানে পরম ভক্তিতে উপস্থাপন করা হয়েছে এই গানে।

    এই গানের গুরু কে, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। হতে পারেন তিনি কবির কোনো দীক্ষাগুরু বা শিক্ষাগুরু। হতে পারেন কবির অন্তর্লোকে বিরাজিত পরমাত্মা, যিনি তাঁর অমোঘ বাণীতে কবির অন্তরের সকল অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা প্রজ্জ্বলিত করেছেন। হতে পারেন সেই পরমগুরু তথা পরমসত্তা, যিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিপালক, যাঁর সৃষ্টিলীলার মহিমার ভিতরে কবি খুঁজে পেয়েছেন তাঁর অমোঘ মন্ত্র। যিনি পরম সত্য সুন্দরের মন্ত্রে কবির হৃদয়কে উদ্ভাসিত করেছেন। গুরু এই যেই হোন না কেন, এ গানটি হয়ে উঠেছে গুরুবাদী গান।

    গুরুভক্ত কবির হৃদয়ে গুরুমন্ত্র হোমের শিখার (যজ্ঞের আগুন) মতো প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছে। সেই পবিত্র আগুনে তাঁর জীবনের সমস্ত পাপ এবং দুঃখ-কষ্ট (পাপ-তাপ) মুহূর্তে ভস্ম হয়ে গেছে। - গানের এই স্থায়ীতে গুরুমন্ত্রের শক্তিকে পরম পবিত্র অশুভ শক্তিনাশী মন্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

    কবির হৃদয় ছিল চিরকালের অজ্ঞানতার অন্ধকারে, দুঃখ বা হতাশায় আবৃত। গুরু যেন সেখানে নিয়ে এসেছেন তাঁর মন্ত্ররূপী মন্দ্র-প্রদীপ তথা পবিত্র জ্ঞানের আলো। প্রদীপের সেই আলোয় চকিতে মনের সমস্ত অন্ধকার কেটে গেছে।

    কবির অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদি-মন্দির উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সেখানে যেন কোনো আদি ঋষি দিবা-নিশি  গুরুর গভীর উদার মন্ত্র জপ করে চলেছেন। যে মন একসময় রিপু দানবের (কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ মাৎসর্য) বাসস্থান ছিল, সেই হৃদিমন্দির হয়ে উঠেছে আনন্দ-কৈলাস তথা পরম আনন্দের স্থান, তথা শিবের আবাস। তাই কবি আনম্র প্রণতিতে পরম শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেছেন পরম গুরুকে।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।  ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে এপ্রিল  (বৃহস্পতিবার ১৫ বৈশাখ ১৩৪৫) এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানির সাথে নজরুল ইসলামের একটি চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তিপত্রের এই গানটির উল্লেখ ছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ১১ মাস।
     
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১২৫৬। পৃষ্ঠা: ৩৮২]
  • রেকর্ড:
    • রেকর্ড কোম্পানির সাথে চুক্তি [২৮ এপ্রিল ১৯৩৮ (বৃহস্পতিবার ১৫ বৈশাখ, ১৩৪৫ ) ]
    • এইচএমভি [১৯৩৮। শিল্পী: নিতাই ঘটক। সুর নিতাই ঘটক। রেকর্ড প্রকাশ হয় নি]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সাধারণ। গুরুবাদী

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।