ঘরে আয় ফিরে, ফিরে আয় পথহারা (ghore ay fire, fire ay pothohara)
ঘরে আয় ফিরে, ফিরে আয় পথহারা ওরে ঘর-ছাড়া ফিরে আয়।
ফেলে যাওয়া তোর বাঁশরি রে কানাই কাঁদে লুটায়ে ধূলায়॥
ব্রজে আয় ফিরে ওরে ও-কিশোর
কাঁদে বৃন্দাবন কাঁদে রাধা তোর,
বাঁধিব না আর ওরে ননীচোর ─ অভিমানী মোর ফিরে আয়॥
তোর মা'র মতন ল'য়ে শূন্য কোল্
জাগে শূন্য মাঠ গ্রহ শোক-বিভোল,
ঝরে যায় যে ফুল মরে যায় ফসল ─ ওরে শ্যামল তোর বেদনায়॥
আসিলে ফিরে ওরে পথ-বেভুল
আবার উঠবে রোদ, আবার ফুঠবে ফুল,
ধানে ভরবে মাঠ আবার বসবে হাট ─ জোয়ার বইবে হৃদ-যমুনায়॥
- ভাবসন্ধান: পৌরাণিক কাহিনি মতে- মথুরার অত্যাচারী রাজা কংসকে হত্যার জন্য কৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে চলে যান। এরপর তিনি ফিরে আসেন নি। কৃষ্ণহীন বৃন্দাবনে তাঁর জনপদবাসীর মনে যে সকাতর হাহাকার ওঠে, তারই আকুল অভিব্যক্তি এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে।
এই গানের পটভূমিতে পাওয়া যায়- ব্রজভূমি, তাঁর মা যশোদা, রাধা এবং বৃন্দাবনের প্রকৃতি। এঁরা একযোগে 'ঘর-ছাড়া' কানাইকে ঘরে ফিরে আসার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছে। কারণ তাঁদের সবার কাছে বৃন্দাবনই কৃষ্ণের ঘর, তাই তিনি ঘরের ছেলে।
কবি তাঁর কল্পবিহারের মনে করেন- কৃষ্ণ ব্রজ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় যে বাঁশি ফেলে গেছেন, সেই প্রিয় বাঁশিটি পর্যন্ত তাঁর বিরহে মাটিতে লুটিয়ে কেঁদে চলেছে। ব্রজবাসীর কাছে এই বাঁশী হয়ে উঠেছে স্মৃতিকাতরতার প্রতীক। তাঁকে না পাওয়ার বেদনায় কাঁদেন বৃন্দবনের জনপদবাসী, কাঁদেন বিরহবিধূর রাধা, কাঁদেন মা যশোদা। শৈশবে কৃষ্ণ ননী চুরি খেতেন বলে- মা যশোদা তাঁকে বেঁধে রাখতেন, কৃষ্ণের অবর্তমানে তাঁর মনে জেগে ওঠে সে কথা বেদনা-কাতর স্মৃতি হয়ে। অপত্য স্নেহে তিনি ভাবেন হয়তো তাঁর প্রতি অভিমানে কৃষ্ণ ফিরে আসেন না। তাই অতীত-কৃত আচরণে অনুতপ্ত যশোদা আপন মনেই বলেন- 'বাঁধিব না আর ওরে ননীচোর'। কবিও তাঁর পুত্রহীন বিরহিনী মায়ের অভিব্যক্তিতে বলেন- সন্তানহীন মা'র শূন্য কোলের মতো ব্রজের শূন্য মাঠ গ্রহ শোক-বিভোল। এই বিরহশোকে ঝরে যায় যে ফুল, মরে যায় ফসল। তাই যেন তিনি ফিরে আসেন নিজের ঘরে।
কবি ভাবেন- পথ ভুল করে আবার যদি কৃষ্ণ ফিরে আসেন, তাহলে ব্রজভূমিতে আবার হাস্যোজ্জ্বল রৌদ্র উঠবে, গাছে গাছে ফুটবে ফুল, ধানে ভরবে মাঠ, বসবে হাট, প্রেমের জোয়ার বইবে হৃদ-যমুনায়।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪৩), এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি এই গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ১ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট, মাঘ, ১৪১৭ / ফেব্রুয়ারী,২০১১) নামক গ্রন্থের ১২৭১ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৩৮৬।
- নজরুলের হারানো গানের খাতা [নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা। আষাঢ় ১৪০৪/জুন ১৯৯৭। গান সংখ্যা ১৪৯। for Mrinal Ghose । ভজন। পৃষ্ঠা ১৭৬]
- রেকর্ড:
- এইচএমভি [আগষ্ট ১৯৩৫ (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪২) । শিল্পী: কমলা দেবী। রেকর্ডটি পরে বাতিল হয়ে যায়]
- এইচএমভি [জুন ১৯৩৬ (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৪৩)। এফটি ৯৭৩৬। শিল্পী: মৃণালকান্তি ঘোষ। সুর নজরুল ইসলাম]
- পর্যায়
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব। কৃষ্ণ। বিরহ
- সুরাঙ্গ: ভজনাঙ্গ
- তাল: কাহারবা