ঘুমায়েছে ফুল পথের ধূলায়, (ওগো) জাগিয়ো না (ghumayechhe ful pother dhulay)

ঘুমায়েছে ফুল পথের ধূলায়, (ওগো) জাগিয়ো না উহারে ঘুমাইতে দাও।
বনের পাখি ধীরে গাহ গান, দখিনা হাওয়া ধীরে ধীরে বয়ে যাও॥
                এখনো শুকায়নি চোখে তার জল,
                এখনো অধরে হাসি ছলছল্;
প্রভাত-রবি শুকায়ো না তায়, ধীর কিরণে তাহারি নয়নে চাও॥
                সামলে পথিক ফেলিও চরণ 

                ঝরেছে হেথায় ফুলের জীবন;
ভুলিয়া দ'লো না ঝরা পাতাগুলি 
 ফুল-সামাধি থাকিতে পারে হেথাও॥

  • ভাবার্থ: সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রস্ফুটিত যৌবনের প্রকাশ ঘটে ফুলের মাধ্যমে। কবি এই গানে একটি সফল বা বিফল প্রণয়ের স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে ঝরে পড়া ফুলরাশিকে উপস্থাপন করেছেন। এই গানের ফুলরাশি তাদের যাপিত-যৌবনের ব্যর্থ বা সফল অধ্যায় শেষে ঝরে পড়েছে কিনা তা, স্পষ্ট নয়। কবি এদের যাপিত-যৌবন শেষে ধুলায় ঝরে পড়া দশাকে সদ্য প্রয়াত প্রাণহীন দেহের মতো অনুকম্পা দেখেয়েছেন। তাই সবাইকে ডেকে বলছেন- এই ফুলরাশিকে যেন কেউ স্পর্শ করে জাগিয়ে না দেয়। কবি বনের পাখিকে শেষ বিদায়ের মরণসঙ্গীতের মতো ধীরে ধীরে অনুচ্চকণ্ঠে গান গাইতে অনুরোধ করেছেন। বসন্তের দখিনা বাতাসকেও তার সচঞ্চল উচ্ছলতা পরিহার করে ধীরে প্রবাহিত হওয়ার অনুরোধ করছেন।

    এই ফুলরাশিতে জমে থাকা জলকণাকে বেদনাবিধুর অশ্রুকণা এবং এদের অম্লান সৌন্দর্য-হাসিকে সদ্য-বিদায়ের চিহ্ন হিসেবে দেখেছেন, এবং সবাইকে তা দেখিয়ে দিয়েছেন। প্রভাতের সূর্যকে তিনি অনুরোধ করেছেন, যেন সে তার কিরণের তেজকে প্রশমিত করে, যাতে সহসাই এই ফুলরাশির সজীব সৌন্দর্য ম্লান হয়ে না যায়।

    পথে পরে থাকা ঝর-ফুলরাশিকে পদদলিত না করার অনুরোধ করে- কবি পথিককে সতর্ক পদক্ষেপের অনুরোধ করছেন। মানুষের সমাধির মতোই কবি ফুলের সমাধিকেও সম্মান দেখিয়েছেন- এই গানের শেষ পঙ্‌ক্তিতে।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ ১৩৪০) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে এই গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল । এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ৭ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • গীতি-শতদল।
      • প্রথম সংস্করণ [বৈশাখ ১৩৪১। এপ্রিল ১৯৩৪। দেশ-কাওয়ালি]।
      • নজরুল রচনাবলী, পঞ্চম খণ্ড [বাংলা একাডেমী। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১ । গীতি-শতদল। গান সংখ্যা ৯।   দেশ-কাওয়ালি। পৃষ্ঠা ২৮৯-২৯০]
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৫২৬।    রাগ: দেশ, তাল: কাহার্‌বা। পৃষ্ঠা: ১৬১]
  • রেকর্ড: এইচএমভি [জানুয়ারি ১৯৩৪ (পৌষ-মাঘ ১৩৪০)]। পি ১১৭৭৭। শিল্পী: আঙ্গুরবালা  [শ্রবণ নমুনা]
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
    • সুধীন দাশ [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, চৌত্রিশতম খণ্ড, (একুশে বই মেলা। ফাল্গুন ১৪১৮/ফেব্রুয়ারি ২০১২)।  ২২তম গান। [নমুনা]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি, জাগতিক, ফুল
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের সুর

  •  

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।