চপল আঁখির ভাষায়, হে মীনাক্ষী ক'য়ে যাও (chopolo ankhir vashay, he minakkhi koye jao)
রাগ: মীণাক্ষী (নজরুল-সৃষ্ট রাগ), তাল: ত্রিতাল
চপল আঁখির ভাষায়, হে মীনাক্ষী ক'য়ে যাও।
না-বলা কোন্ বাণী বলিতে চাও॥
আড়ি পাতে নিঝ্ঝুম বন
আঁখি তুলি' চাহিবে কখন,
আঁখির তিরস্কারে ঐ বন-কান্তারে ফুল ফোটাও॥
নিটোল আকাশ টোল খায় তোমারি চাওয়ায়, হে মীনাক্ষী,
নদী-জলে চঞ্চল সফরী লুকায়, হে মীনাক্ষী!
ওই আঁখির করুণা,
ঢালো রাগ অরুণা,
আঁখিতে আঁখিতে ফুল-রাখি বেঁধে দাও॥
- ভাবসন্ধান: গানটি নজরুল রচিত 'নব রাগমালিকা' গীতিনাট্যের প্রথম অনুষ্ঠানের তৃতীয় গান। মৎসের ন্যায় গতি বক্র ও প্রকৃতি হওয়ায় রাগটির নামকরণ করা হয়েছিল 'মীণাক্ষী' । বেতার জগৎ-এ কবির লেখা থেকে জানা যায়, রাগটি নীলাম্বরী, কাফি এবং হংসকিঙ্কিনী রাগের আভাষ পাওয়া যায়। এই রাগ চঞ্চল প্রকৃতির। বর্জিতস্বর: আরোহণে ' ণ '। এর প্রকৃতি চঞ্চল।
কোনো এক মৎস্য-নয়নার উপমায় গানটির সূত্রপাত হয়েছে। কবি তার চঞ্চল চোখের ভাষা বুঝতে পারে না। নিঝুম বন তার চোখের ভাষা অনুভব করার জন্য আড়ি পাতে। ওই আঁখির কটাক্ষেই যেন বনফুল ফুটে উঠে। তার দৃষ্টিপাতে যেন আকাশের নিটল গালে টোল পড়ে। তার চোখের চাঞ্চল্যে লজ্জা পেয়ে নদী জলে চঞ্চল পুঁটি মাছও নিজেকে লুকায়। ওই আঁখির কারুণ্য যেন প্রভাতী সূর্য রঙ ছড়ায়। কবি মৎস্য-নয়নার চোখে চোখে পুষ্প-রাখির মতো সৌন্দর্য-রাখি বাঁধতে চান। মূলত; এই গানটিতে রয়েছে আবেগের অদম্য স্বেচ্ছাচারিতা। এর বাইরে গানটি মহত্তম হয়ে উঠে নি। গানটির ভিতরে যা রয়েছে, তা হলো মূলত বাণী ও সুরের মেলবন্ধনে সৃষ্টি নান্দনিক বিমূর্ত রূপরাশি।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জানুয়ারি, (সোমবার ২৯ পৌষ ১৯৪৭) সন্ধ্যা ৭.২০টায় কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে 'নব রাগমালিকা' গীতিনাট্যের প্রথম পর্ব প্রচারিত হয়েছিল। এই গানটি ছিল গীতিনাট্যের তৃতীয় গান। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৭ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুলগীতি-অখণ্ড,হরফ। নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১৩৮৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৪১৮-৪১৯।
- নবরাগ
- নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)। ৩য় গান। পৃষ্ঠা: ৬-৮।
- হরফ প্রকাশনী। কবির ৭৩তম জন্মদিন, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ)। ৩য় গান। পৃষ্ঠা: ১৩-১৪।
- সন্ধ্যামালতী
- প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৭৭ (জুলাই-আগষ্ট ১৯৭১)]
- নজরুল রচনাবলী জন্মশতবার্ষিকী সপ্তম খণ্ড [১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৫, ২৫ মে ২০০৮। সন্ধ্যামালতী, গান ৫৩। পৃষ্ঠা: ১৫২]
- পত্রিকা:
- বেতার জগৎ, ১৬ জানুয়ারি, ১৯৪০ সংখ্যা 'নব রাগ মালিকা ১৩ জানুয়ারি, ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ: শিল্পী: গীতা মিত্র।
- বেতার:
- নব রাগমালিকা(প্রথম অধিবেশন)। নজরুল-সৃষ্ট রাগে রচিত গীতিনাট্য [১৩ জানুয়ারি, ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (সোমবার ২৯ পৌষ ১৯৪৭, সন্ধ্যা ৭.২০। কলকাতা বেতারকেন্দ্র]
- নব রাগমালিকা(প্রথম অধিবেশন)। নজরুল-সৃষ্ট রাগে রচিত গীতিনাট্য [১৩ জানুয়ারি, ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (সোমবার ২৯ পৌষ ১৯৪৭, সন্ধ্যা ৭.২০। কলকাতা বেতারকেন্দ্র]
- সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাবলি:
- স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক। [নবরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)] [নমুনা]
- বিষয়াঙ্গ: নাট্যগীতি [প্রকৃতি ও সঙ্গীত]
- সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ
- রাগ: মীণাক্ষী (নজরুল-সৃষ্ট রাগ)
- তাল: ত্রিতাল
- গ্রহস্বর: উদারার কোমল নিষাদ।