অরুণ-রাঙা গোলাপ-কলি (oruno-ranga golap koli)

অরুণ-রাঙা গোলাপ-কলি
           কে নিবি সহেলি আয়।
গালে যার গোলাপী আভা
          এ ফুল-কলি তারে চায়॥
ডালির ফুল যে শুকায়ে যায়
কোথায় লায়লী, শিরী কোথায়
কোথায় প্রেমিক বিরহী মজনু
        এ ফুল দেব কাহার পায়॥
পূর্ণ চাঁদের এমন তিথি
ফুল-বিলাসী কই অতিথি
বুলবুলি বিনে এ গুল্‌ যে
       অভিমানে মুরছায়

  • ভাবার্থ: এই গানটি মূলত গোলাপবন্দনা। গানটিতে রয়েছে- সৌন্দর্য-পাগল কবির আবেগের আতিশয্য। তাই এই গান হয়ে উঠেছে নিতান্তই কল্পলোকের বিহার। কল্পাশ্রয়ী হয়েও এই গানটিতে রয়েছে একটি চিরন্তন  সত্যের প্রকাশ। তা হলো- সৌন্দর্যের যথাযথ মূল্য সবাই দিতে পারে না, কারণ সবার জন্য সকল সৌন্দর্য নয়। অবশেষে সঙ্গলাভ থেকে বঞ্চিত প্রেমের ফুল তার সকল সৌন্দর্য নিয়ে অভিমানে ঝরে যায়। সব মিলিয়ে গানটি হয়ে উঠেছে প্রকৃতি ও প্রেমের মনোদর্শেনের গান।

    ভোরের সূর্যের লালিমা মাখা গোলাপের রূপে মুগ্ধ কবি, এর সৌন্দর্য-সৌরভ শুধু নিজে উপভোগ করতে চান না, তিনি এই উপভোগের অংশভাগী হওয়ার জন্য সকলকে দিতে চান। তাই সখিদের ডেকে বলেন কে নিবি এ ফুল। কিন্তু কার কাছে গোলাপ কলি যেতে ইচ্ছুক, তা গোলাপের হয়ে কবি জানিয়ে দেন। যার কপোল গোলাপী আভায় সৌন্দর্যমণ্ডিত, গোলাপ তার কাছে যেতে চান।

    ডালিতে সঞ্চয়িত গোলাপ কবি দিতে চান প্রেমের চিরন্তন প্রেমিক-প্রেমিকা প্রতীক লায়লী-মজনু, শিরি-ফরহাদকে। কিন্তু তিনি তাঁদের সমতূল্য এমন প্রেম-যুগলকে খুঁজে পান না। পূর্ণিমা স্নিগ্ধ প্রেম-রাতে এই ফুলকে  ভালবেসে গ্রহণ করবে, এমন কাউকে কবি খুঁজে পানা না। অবশেষে বুলবুলির সঙ্গলাভ থেকে বঞ্চিত এ ফুল অভিমানে ঝরে যায়।
  • রচনাকাল ও স্থান:   গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। নজরুলের সুস্থাবস্থায় এই গানটি কোথাও প্রকাশিত হয় নি।
     
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১০১৬। পৃষ্ঠা: ৩১০]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (জাগতিক, ফুল), প্রেম

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।