চুম্বক পাথর হায় লোহারে দেয় গালি (chumbok pathor hay lohare dey gali)
চুম্বক পাথর হায় লোহারে দেয় গালি,
আমার গায়ে ঢ'লে প'ড়ে কুলে দিলে কালি॥
লোহা বলে, হায় পাষাণী
তুমিই লহ বুকে টানি',
(কেন) সোনা-রূপা ফেলে দিয়ে আমায় টান খালি॥
চুম্বক আর লোহায় চলে দ্বন্দ্ব সারা বেলা,
কে'দে মরে, বুঝতে নারে (এ) কোন্ নিঠুরের খেলা।
হঠাৎ তাদের দৃষ্টি গেল খুলে
ঊর্দ্ধ পানে চায় নয়ন তুলে,
(দেখে) খেলেন তাদের নিয়ে রস-শেখর বনমালী॥
- ভাবসন্ধান: কবি রূপকল্প এবং সন্ধ্যা ভাষার আশ্রয়ে এই গানে রাধাকৃষ্ণের প্রেম-লীলাকে উপস্থাপন করেছেন অপূর্ব কৌশলে। চুম্বক লোহাকে প্রেমের আকর্ষণে যেমন কাছে টানে। লোহাও তার আকর্ষণে চুম্বকের কোলে নিজেকে সমর্পণ করে। কৃষ্ণরূপী লোহা টানে, আর চুম্বকপাথর-রূপিণী রাধা তাঁর কূলমান বিসর্জন দিয়ে কলঙ্কিনী হয়ে কৃষ্ণের কাছে আত্মসমর্পণ করে। রাধার এই বচনকে কবি ব্যাঙ্গার্থে গালি হিসেবে অভিহিত করেছেন। কৃষ্ণ রাধাকে বলেন- সে যেনো পাষাণী (চুম্বক পাথর) এই লোহাকে (কৃষ্ণ) তার প্রেমালিঙ্গনে বুকে টেনে নেন। তাই যদি না নেবেন, তবে সোনা রুপা ফেলে তাঁকেই কেন শধু প্রেমাকর্ষণে কাছে টানেন।
বৃন্দাবনের প্রেমকুঞ্জে- চুম্বক আর লোহায় চলে প্রেমের মিলন-বিরহের দ্বন্দ্ব। মিলনের আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেলিত রাধা কৃষ্ণের মাঝেই চলে প্রেমের খেলা। এই প্রেমের চূড়ান্ত পরিণতি পায় না বলে- এ খেলাকে কবি নিঠুরের খেলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হঠাৎ কবি তাঁর অন্তর্দৃষ্টি মেলে দেখতে পান- এ সবই রস-শেখর হরির (রসশ্রেষ্ট বিষ্ণু, কৃষ্ণ) সাজানো খেলা। এ খেলার অংশভাগী রাধা এবং হরি নিজেই। আপাত দৃষ্টিতে কবির কাছে মনে হয়েছিল নিঠুর খেলা, তার সবই হলো বনমালী-রূপী হরির রসলীলা।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট, মাঘ, ১৪১৭/ফেব্রুয়ারি, ২০১৪)। গান সংখ্য ১২৯৪। পৃষ্ঠা: ৩৯২-৩৯৩।
- পর্যায়:
- বিষবাঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব সঙ্গীত। রাধাকৃষ্ণ-লীলা