চৈতালি চাঁদিনী রাতে (choitali chandini rate)
চৈতালি চাঁদিনী রাতে—
নব মালতীর কলি মুকুল-নয়ন তুলি’
নিশি জাগে আমারি সাথে॥
পিয়াসি চকোরীর দিন-গোনা ফুরালো
শূন্য-গগনের বক্ষ জুড়ালো
দক্ষিণ-সমীরণ মাধবী-কঙ্কণ
পরায়ে দিল বনভূমির হাতে॥
চাঁদিনী তিথি এলো, আমারি চাঁদ কেন এলো না;
বনের বুকের আঁধার গেল গো − মনের আঁধার গেল না।
এ মধু-নিশি মিলন-মালায়
কাঁটার মত আমি বিঁধিয়া আছি, হায়!
সবারই আঁখিতে আলোর দেয়ালি
অশ্রু আমারি নয়ন-পাতে॥
- ভাবসন্ধান: এটি সারঙ্গ-রঙ্গ গীতি-আলেখ্যের প্রথম প্রচারের ষষ্ঠ গান। মধুমাধবী সারং রাগে নিবদ্ধ এই গানে পাওয়া চৈতালী চাঁদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে প্রিয়াসঙ্গহীন বিরহী কবির হাহাকার।
বসন্তকে বলা হয় মধুঋতু। মূলত মধুমাধবী সারং-এর মুখ্য এই মধুঋতুর রাগ। আবার এই রাগের পরিবেশনের সময় দ্বিতীয় প্রহর। কিন্তু এই গানের সময় চৈতালী চাঁদনী রাত। কবি বসন্তের মধ্যাহ্নের ছায়াকে চৈতালী চাঁদনী রাতে এনেছেন বাণীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে।
প্রিয়াসঙ্গহীন কবি চৈতালি চাঁদনী রাতে নিদ্রাহীন। নব মালতীর কলি তাঁর প্রেমের পাপড়ি মেলে বিকশিত হওয়ার অপেক্ষায় জেগে থাকে। কবিও জেগে থাকেন তাঁর প্রেমের মুকুলের বিকশিত হওয়ার অপেক্ষায়। কথিত আছে চকোরী চাঁদের জ্যোৎস্না পান করার আশায় অপেক্ষা করে। চৈতালী চাঁদ চকোরীর সে আশাকে পূর্ণ করেছে।
বসন্তের দখিনা বাতাসে মাধবী বিকশিত হয়ে যৌবনরাগে বনভূমিকে অলঙ্কৃত করছে। কিন্তু কবির প্রিয়ারূপী চাঁদ তাঁর মনের আকাশে জ্যোৎস্না ছড়ায় না। তাই কবি মনোলোকের বনভূমি প্রেমের মাধবীকোড়কে অলঙ্কৃত হয় না। তাই বিরহের আঁধার কেটে তাঁর কবির মনে প্রেমের জ্যোৎস্না আসে না। কবির পাওয়া চৈতলি চাঁদের বাসন্তী রাতে, প্রেমের রচিত মিলন-মালা, বিরহের কাঁটায় দুঃসহ যন্ত্রণা হয়েই রয়। মালতী, মাধবী, চকোরী সবার চোখে চৈতালি চাঁদ প্রেম-দ্যূতিময় বাতি জ্বালিয়ে দেয়। তার পরিবর্তে কবির বিরহ-কাতর চোখ থেকে ‘না-পাওয়ার বেদনা’ অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় নি। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল (শনিবার ২৪ চৈত্র ১৩৪৬), গানটি প্রথম সারঙ্গ রঙ্গ গীতি আলেখ্যের সাথে প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ১০ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ২২৫। পৃষ্ঠা ৭০]
- বেতার
- সারঙ্গ রঙ্গ (গীতি আলেখ্য. সারঙ্গ অঙ্গের রাগভিত্তিক অনুষ্ঠান)
- প্রথম প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ৬ এপ্রিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৪ চৈত্র ১৩৪৬), সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৭.১৫-৭.৫০ মিনিট।
[সূত্র: বেতার জগৎ-এর ১১শ বর্ষ, ৭ম সংখ্যা অনুষ্ঠান সূচী। পৃষ্ঠা: ৩৪০, ৩৬৯]
- প্রথম প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ৬ এপ্রিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৪ চৈত্র ১৩৪৬), সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৭.১৫-৭.৫০ মিনিট।
- সারঙ্গ রঙ্গ (গীতি আলেখ্য. সারঙ্গ অঙ্গের রাগভিত্তিক অনুষ্ঠান)
- রেকর্ড: সেনোলা [মে ১৯৪১ (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৮)। কিউএস ৫২৩। শিল্পী: রথীন চট্টোপাধ্যায়। মধুমাধবী সারঙ্গ-ত্রিতাল। সুর নজরুল ইসলাম] [বিপুল কুমার (শ্রবণ নমুনা)]
- রথীন চট্টোপাধ্যায় [শ্রবণ নমুনা]
- শারমিন সাথী ইসলাম [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: আসাদুল হক। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (চতুর্থ খণ্ড)। দ্বিতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। নবম গান। পৃষ্ঠা- ৬২-৬৫ [নমুনা]
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম।
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি, প্রেম ও সঙ্গীত
- সুরাঙ্গ:
- রাগ: মধুমাধবী সারং
- সুরের অঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ
- তাল: ত্রিতাল
- গ্রহস্বর: নর্সর্র