চৈত্র পূর্ণিমা রাত্রি, মাধবী কানন মধুক্ষরা (choitro purnima ratri, madhobi kanon modhukkhora)
চৈত্র পূর্ণিমা রাত্রি, মাধবী কানন মধুক্ষরা।
মধুর আনন্দ উল্লাসে রাত্রে ভাসে বসুন্ধরা॥
মুকুল-সৌগন্ধ ভারে দখিনা পবন
নৃত্যের ছন্দে চলে মর্মরিয়া বেণু-বন।
তটিনী ঊর্মির মর্ম নিয়া
শত ভঙ্গে চন্দ্রে নিবেদিয়া ─
দুর্নিবার প্রেমোচ্ছ্বাসে কণ্ঠ-কল-গীতে ভরা॥
মধুর পূণির্মা নিশি, পূণর্পাত্র শিরাজি হস্তে যেন সাকি,
জোছনার মদির স্বপ্নে মুকুলিত মাধবীর আঁখি॥
গোলাপের স্নিগ্ধগন্ধে অস্থির অন্তর
আজি রাত্রি হাসিছে সমাহিত প্রসন্ন সুন্দর।
পরিতৃপ্ত চকোরের রুদ্ধ-কণ্ঠ১ লড়িতে চন্দ্রর
পান করি শারাব গেলাস-ভরা॥]
- ভাবার্থ: মদিনা নাটকের নর্তকীর গান হিসেবে কবি এই গানটি রচনা করেছিলেন। এই গানটিতে চৈত্র পূর্ণিমা রাতের সৌন্দর্যকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই গানের মধুশ্রাবী চৈত্র পূর্ণিমা রাত্রির প্রভাবে মাধবী কানন মধুক্ষরা হয়ে ওঠেছে, তারই উল্লাসে রাত্রের পৃথিবী সৌন্দর্যের উল্লাসে মাতোয়ারা হয়েছে। এমন সুরভিত পুষ্প-মুকুলের সৌগন্ধে ভরপুর দখিনা বাতাস নৃত্যের ছন্দে বেণুবনকে নৃত্যের ছন্দে মাতিয়ে তুলেছে। যেন নদীর তার প্রেমে মোহিত হয়ে পূর্ণিমার চাঁদকে তার তরঙ্গমালার শত ভঙ্গিমায় প্রেমার্ঘ নিবেদন করে চলেছে। কবির কাছে নদীর এই তরঙ্গে অনুভব করেছেন সঙ্গীতময় দুর্নিবার প্রেমোচ্ছ্বাসের কলধ্বনির অনুরণন।
এই মধু-পূণির্মা যেন পূণর্পাত্র হাতে সাকি হয়ে প্রকৃতিকে শিরাজি বিতরণ করে চলেছে। তারই প্রভাবে দখিনা বাতাস শিরাজি রূপী জোছনার মাদকতায় স্বপ্নময় করে তুলছে মুকুলিত মাধবীর আঁখি। গোলাপের স্নিগ্ধ গন্ধে সমাহিত এই রাত্রিকে প্রসন্ন সুন্দর হাসিতে ভরিয়ে দিয়েছে। নজরুলসঙ্গীত সংগ্রহে শেষের দুটি পংক্তিকে- অসম্পূর্ণ হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছে। এই গ্রন্থে মুদ্রিত এই শেষ দুটি পংক্তি অনুসারে যে ভাবার্থ অনুমান করা যায়, তা হলো- সাকিরূপিণী রাত্রির পরিবেশিত জ্যোৎস্না-শরাব গেলাস ভরে পান করে, চাতক (জ্যোৎস্না-পানকারী পাখি) পরিতৃপ্ত এবং রুদ্ধকণ্ঠ।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুলাই(বৃহস্পতিবার, ২৪ আষাঢ়, ১৩৪৯) নজরুল কলকাতা বেতারকেন্দ্রে 'হারামণি' নামক লুপ্তরাগ অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান করার জন্য আসেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি গান করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সুস্থতার কিছু আগে নজরুল 'মদিনা' নামক একটি নাটকের খসড়া তৈরি করেছিলেন। এই নাটকের জন্যই তিনি এই গানটি রচনা করেছিলেন। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪৩ বৎসর ১ মাস।
- গ্রন্থ:
- মদিনা। নজরুল রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ অষ্টম খণ্ডে [১২ই ভাদ্র ১৪১৫, ২৭শে আগষ্ট ২০০৮] ৫। আমার 'মদিনা' নাটকের নাচের গান। (নর্তকী তরুণী গাইবে)। পৃষ্ঠা: ৩০২। পাদটীকায় আছে- 'সম্ভবত এখানে কবি আরো কিছু শব্দ যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। এটিও অপ্রকাশিত।
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৩৮৯।]
- পত্রিকা। 'আমার মদিনা'।'নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকা' জ্যৈষ্ঠ ১৩৯২ সংখ্যা। পঞ্চম গান/নর্তকী তরুণীদের গান
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি, বসন্ত, পূর্ণিমা রাত্রি। [নাট্যগীতি]