ছন্দের বন্যা হরিণী অরণ্যা (chhonder bonya horini oronya)

ছন্দের বন্যা হরিণী অরণ্যা
চলে গিরি-কন্যা চঞ্চল ঝর্না
নন্দন-পথ-ভোলা চন্দন-বর্ণা॥
গাহে গান ছায়ানটে, পর্বতে শিলাতটে
লুটায়ে পড়ে তীরে শ্যামল ওড়না॥
ঝিরি ঝিরি হাওয়ায় ধীরি ধীরি বাজে
তরঙ্গ-নূপুর বন-পথ মাঝে।
এঁকেবেঁকে নেচে যায় সর্পিল ভঙ্গে
কুরঙ্গ সঙ্গে অপরূপ রঙ্গে
গুরুগুরু বাজে তাল মেঘ-মৃদঙ্গে
তরলিত জোছনা-বালিকা অপর্ণা॥

  • ভাবসন্ধান: এটি একটি প্রকৃতি পর্যায়ের জাগতিক উপপর্যায়ের পাহাড়ি ঝর্না বিষয়ক গান। এই গানে কবি অরণ্যের চঞ্চল ছন্দে চলা হরিণীর উপমায় পাহাড়ি কন্যারূপিণী ঝর্নাকে উপস্থাপন করেছেন। কবি তাঁর কল্পলোকের নন্দন-দর্শনে, স্বর্গের নন্দনকাননের যাত্রা থেকে পথচ্যুত চন্দন বর্ণের ঝর্নাকে পথভোলা কন্যা হিসেবে কল্পনা করেছেন।

    এই ঝর্নার চলার পথে উত্থিত ধ্বনিলহরীতে কবি খুঁজে পেয়েছেন ছায়ানটের রাগাশ্রয়ী সুরসৌন্দর্য। পাহাড়ি বন্ধুর চলার পথে এই ঝর্নার বিচ্ছূরিত জলকনা, শিলতটে  জলকন্যার শ্যামল ওড়ানার মতো লুটিয়ে পড়ে। পাহাড়ি পথের উপল-নুড়ির অভিঘাতে ধ্বনিত ছন্দে,  কবির কাছে মনে হয় এই জলকন্যার তরঙ্গিত নৃত্যচঞ্চল জলনূপুরের ঝঙ্কার। মধুর স্নিগ্ধ এ ধ্বনি মিশে যায় পাহাড়ি মৃদুমন্দ বাতাসের ছন্দের সাথে। 

    হরিণের বঙ্কিম নৃত্যচপল চলার ছন্দের সাথে অপরূপ রঙ্গলীলায় অংশভাগী হয়ে এই ঝর্নাও যেন আঁকাবাঁকা সর্পিল পথে চলে। বর্ষার গুরুগুরু মন্দ্রিত মেঘধ্বনি হয়ে ওঠে ছন্দিত মৃদঙ্গ-নাদ। কবি এই রুপালি ঝর্নাধারাকে তরলিত চাঁদের আলোর সাথে তুলনা করেছেন। এই গানের শেষ শব্দ 'অপর্ণা'। সনাতন হিন্দুধর্ম মতে মহাদেবকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য পর্ণগ্রহণ থেকে নিবৃত্তা উমার নাম অপর্ণা।  কবি এই ঝর্‌নাকে উমার মতো তাপসিনী পাহাড়ি কন্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন কি না তা বুঝা যায় না। অন্যান্য ঝরনার মতো এর জলরাশি বনের ঝরা পাতায় কলুসিতা নয়- এ কারণে এ ঝর্না অপর্ণা, তাও স্পষ্ট যায় না।
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৪০ বঙ্গাব্দের  ভাদ্র (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ১৯৩৩) মাসে বুলবুল পত্রিকায় এই গানটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ৩ মাস
     
  • গ্রন্থ:
    • গীতি-শতদল  
      • প্রথম সংস্করণ [বৈশাখ ১৩৪১। এপ্রিল ১৯৩৪] ইমন-মিশ্র-কাওয়ালি
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংকলন। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১।  গীতি-শতদল। গান সংখ্যা ৩। ইমন-মিশ্র-কাওয়ালি। পৃষ্ঠা ২৮৬-২৮৭]
         
  • পত্রিকা:বুলবুল। ভাদ্র ১৩৪০ (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ১৯৩৩) সংখ্যা
  • রেকর্ড: এইচএমভি [ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪০)] এন ৭১৯৫শিল্পী: কুমারী পারুল সেন] [শ্রবণ নমুনা]
     
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ। [ নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চম খণ্ড। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] দশম পৃষ্ঠা: ৭০-৭১।  [নমুনা]
     
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (জাগতিক, ঝর্‌না)
    • সুরাঙ্গ: কাওয়ালি
    • তাল: কাহারবা
    • গ্রহস্বর: সা।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।